রাস্তায় বড্ড যানজট। গাড়ি চালানো আজকাল প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে একপ্রকার। এখন বেরিয়েই যখন পড়েছি, তখন আর ফেরার উপায় নেই। তাই অগত্যা যানজটে আটকে হর্নের ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ শুনছি। হঠাৎ কাঁচের জানালায় টোকা পড়লো। দেখি শাড়ি পরা পুরুষালি চেহারার এক সমকামী মানুষ,কপালে গোল লাল টিপ,চোখে সুন্দর করে লাগানো কাজল, কিছু টাকা চাইছিল সে আমার কাছে। দেরি না করে ১০০ টাকা দিয়ে বললাম, “কিছু খেয়ে নিও”। দেখলাম বড্ড খুশি হয়ে চলে গেলো সে পাশের গলি দিয়ে। খুশি লাগছিল নিজের খুব তাকে হাসতে দেখে। এরপর আবার আমার রোজকার জীবনে আমি ব্যাস্ত হয়ে পড়েছিলাম।
কয়েক সপ্তাহ পরের কথা। রাস্তার ধারের চায়ের দোকান টায় দাড়িয়ে মনের সুখে চা পানে ব্যস্ত ছিলাম। হঠাৎ চোখ চলে গেল সামনের স্কুলের গেটে। সেদিনের সেই ভীষণ জ্যামের মধ্যে দেখা হওয়া সেই মানুষটি। একটা বাচ্ছা মেয়ের হাত ধরে স্কুল থেকে বাড়ির দিকে যাচ্ছিল।আগ্রহ হলো খুব বিষয় টা জানার। পিছু পিছু বাড়ি অবধি গিয়ে আর থাকতে না পেরে ডাকলাম –
– শুনছেন?
– আরে আপনি, কেমন আছেন?
– এইতো ভালোই। মেয়েটি আপনার?
– হ্যাঁ। মা নাম বলো তো নিজের আঙ্কেল কে।
বাচ্চা মেয়ে টি বলে উঠলো,
“আমার নাম শ্রুতি। এটা হলো আমার মাম্মাম। জানো আঙ্কেল, আগের বাড়ি থেকে আসার সময় বন্ধুদের জন্য মন খারাপ হতো খুব। কিন্তু মাম্মাম খুব ভালো। আমাকে কত পুতুল কিনে দিয়েছে। কত নতুন নতুন জামা, এখন আমি স্কুলেও যাই জানো? কত ভালো ভালো টিফিন বানিয়ে দে য় আমাকে মাম্মাম। আমি আমার মাম্মামকে খুব খুব ভালোবাসি।“
আমি হালকা হেসে ওনাকে বললাম ,
– কি নাম আপনার?
– শান্তা
– বাহ্। খুব ভালো লাগলো জানেন। আপনারা এরকম ভাবে কাজ করেন জেনে খুব ভালো লাগলো।
– আসলে দোষ টা আপনার নয়,আমাদের এই সমাজ আসলে বড্ড গরীব, মানুষিকতার দিক দিয়ে।তারা সবকিছুকেই বাহ্যিক দিক দিয়ে বিচার করে। সেটার ভিতরে কি আছে ভাবনা তারা, শুধু বাইরের গড়ন,রংচং,পোশাক আশাক, এসব দেখেই একটা মানুষকে judge করে ফেলে। তারা জীবনে উঠে যতবার দাঁড়াতে গেছে,এই গরীব সমাজ তাকে বারবার পিছনে টেনে ফেলতে চেয়েছে।আমরাও মানুষ,আমাদেরও মাতৃত্ব বোধ কাজ করে,আমরাও ভালোবাসতে জানি,স্নেহ করতে জানি এগুলো খুব ই অদ্ভুত ব্যাপার তাদের কাছে।
– ঠিকই বলেছেন। আমি চেষ্টা করবো নিজের সাধ্য মতো নিজেকে এই গরীবি ভাব থেকে সরিয়ে আনার।কখনো কোনো প্রয়োজন হলে নিঃসংকোচে বলবেন,আমার ফোন নম্বর দিয়ে রাখলাম আপনাকে। ভালো থাকবেন
(সত্য ঘটনা দ্বারা অনুপ্রাণিত)