Star Cast: অভিষেক বচ্চন, আদিত্য রয় কাপুর, রাজকুমার রাও, পঙ্কজ ত্রিপাঠি, রোহিত সরফ, ফাতিমা সানা শেখ, সান্য মালহোত্রা, আশা নেগি
Director: অনুরাগ বসু
ফাঁস হওয়া সেক্স টেপ, টাকা ভর্তি স্যুটকেস থেকে শুরু করে দু’টো ভয়াবহ খুন; চারটে একেবারে আলাদা ধরনের ভাগ্য, কাকতালীয় ঘটনা এবং একজন পাগল অপরাধীর কারণে একে-অপরের সঙ্গে ধাক্কা খায়। জীবনের সঙ্গে দাবার ছকের তুলনা তো অনেকবারই করা হয়েছে, কিন্তু লুডো থেকে বের হওয়া এই চার রঙের গল্প একেবারেই অন্যরকম। কথায় আছে, যা কিছু ঘটে তা শুধুমাত্র কাকতালীয় ঘটনা নয়। জীবনের সফরে অনেক মুখই একে-অপরের সামনাসামনি আসে, যার পেছনে কোনও না কোনও কারণ থাকে, যেটার সম্পর্কে আপনি অজানা। পরিচালক অনুরাগ বসুর ‘লুডো’ সেরকমই একটি ছবি। ছবিতে একটি সংলাপ রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে, ‘ইনসান ক্যায়া হ্যায়? লাইফ কী বিসাত পর হরি, নীলি, লাল, পীলী গোটিয়া...অউর ইন সবকা পাসা হ্যায় উপারওয়ালে কে হাথ।’
ছবির গল্প লুডো-তে চারটে গল্প একসঙ্গে দেখানো হয়েছে, যেগুলি আলাদা আলাদা মোড় হলেও একটা সময়ে তারা একে-অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। প্রথম গল্প হল আকাশের (আদিত্য রয় কাপুর), যাঁর প্রেমিকা অহনার (সান্য় মালহোত্রা) সঙ্গে একটি সেক্স টেপ পর্ণ সাইটে ফাঁস করে দেওয়া হয়। অন্যদিকে অহনার চারদিনের মাথায় অন্য কারোর সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কথা। কিন্তু এই টেপ এখন উভয়ের জীবনেই সমস্যার সৃষ্টি করেছে এবং এঁদের এই সমস্যা থেকে বের করতে পর্দায় আসেন সত্তু ত্রিপাঠী। দ্বিতীয় গল্প হল বিট্টু তিওয়ারির (অভিষেক বচ্চন)। যাঁকে কোনও একসময় সত্তুর ডান হাত বলে মানা হত। কিন্তু সংসার করার চক্করে বিট্টু অপরাধ জগত থেকে সরে আসেন। বিট্টুর এখন ভরপুর পরিবার। কিন্তু কথায় আছে পুরনো কর্ম কখনও পিছু ছাড়ে না। এটাই এঁদের জীবনের ট্র্যাজেডি। তৃতীয় গল্প হল অলোক ওরফে আলুর (রাজকুমার রাও)। যিনি পিঙ্কিকে (ফাতিমা) প্রচণ্ড ভালোবাসেন। আর এই ভালোবাসার খাতিরে অলোক চুরি থেকে খুন সবকিছু করে বসে। চতুর্থ গল্প হল রাহুল আর শ্রীজার। যাঁরা নিজের নিজের জীবন ও চাকরি নিয়ে সমস্যায় রয়েছেন। কিন্তু এক ঝটকায় ভাগ্য এমন বদলে গেল যে দুটজনের সহজ সমতল জীবন অপ্রত্যাশিত হয়ে যায়। আর এই সব গল্প ও চরিত্রগুলির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সত্তু ত্রিপাঠি (পঙ্কজ ত্রিপাঠি)। সত্তুর জীবনের ঘটনা এই সব চরিত্রগুলিকে প্রভাবিত করে বা এরকমভাবেও বলা যায় যে সব গুটিগুলিকে নিজের নিজের ঘরে পৌছে দেয়। অবশেষে অভিষেক বচ্চনের মৃত্যু তে এও বোজা যায় লুডোতে একা থাকা গুটি-ই খওয়া যায়।
নির্দেশনা পরিচাক অনুরাগ বসুর কাজ নিয়ে কোনও সন্দেহ প্রকাশ না করাই ভালো। বরফি থেকে শুরু করে মেট্রো সব ছবিতেই প্রতিটি চরিত্র যেন কথা বলে তাঁর নির্দেশনায়। একইভাবে ‘লুডো’ ছবিতেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ছবির পাঞ্চলাইন ‘ইনসান ক্যায়া হ্যায়? লাইফ কী বিসাত পর হরি, নীলি, লাল, পীলী গোটিয়া...অউর ইন সবকা পাসা হ্যায় উপারওয়ালে কে হাথ।’ এই ধারণাকেই অনুরাগ বসু চারটে গল্পের মাধ্যমে একসঙ্গে কিন্তু আলাদা আলাদা ভাবে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। কিছু জায়গায় তিনি সফলও হয়েছেন। এ ছবিতে কমেডি, আবেগ, রহস্য ও ভরপুর অস্থিরতা রয়েছে। তবে এরপর কি হবে, তা অনুমান করার জন্য হয়ত আপনি ব্যর্থ হতে পারেন। দারুণ অভিনেতাদের অভিনয়ের সমন্বয় ও সঙ্গে পরিচালকের পরিচালনা এই ছবির প্রধান ইউএসপি। যদিও ছবির কিছু কিছু জায়গা ‘লুডো’ ২০১৯ সালে চর্চিত তামিল ছবি ‘সুপার ডিলাক্স’-এর কথা মনে করিয়ে দেয়।
অভিনয় একটা ছবিতেই যেখানে অসাধারণ সব অভিনেতারা রয়েছেন সেই ছবির অভিনয় অসাধারণ হবে সেটা বলাই বাহুল্য। সব চরিত্রেই অভিনেতারা তাঁদের দক্ষ অভিনয় দেখাতে সফল হয়েছেন। বিট্টু তিওয়ারির চরিত্রে অভিষেক বচ্চন একেবারে ফিট ছিলেন। বহুদিন পর অভিষেক আবারও তাঁর অভিনয় দেখানোর সুযোগ পেলেন এবং তিনি নিরাশ করেননি। কখনও রাগ, কখনও ভালোবাসা আবার কখনও আবেগ তাঁর চোখে মুখে স্পষ্ট ছিল। সত্তু ত্রিপাঠির চরিত্রে পঙকজ ত্রিপাঠি একেবারে যথাযথ। তাঁর অভিনয় নিয়ে কোনও প্রশ্নবোধক চিহ্ন রাখা যাবে না। অলোক কুমারের চরিত্রে রাজকুমার রাও একেবারে নিজেকে ঢুকিয়ে নিয়েছিলেন, তিনি যে সব চরিত্রেই পারদর্শী তা আবার একবার প্রমাণ করলেন। অন্যান্য অভিনেতা তথা সান্য মালহোত্রা, ফাতিমা, আদিত্য রয় কাপুর সহ অন্যান্যরাও যাঁর যাঁর চরিত্রে যথেষ্ট দক্ষ অভিনয় প্রদর্শন করেছেন।
অন্যান্য দিক শুধু পরিচালনা বা অভিনয় নয়, বরং অনুরাগ বসু এই ছবিতে গল্প, সিনেমাটোগ্রাফি, পটকথা আর প্রযোজনার দায়িত্ব নিয়েছেন। অনুরাগ বসুর ছবিতে নিজস্ব একটা ছাপ থাকে, যা ‘লুডো’ ছবিতেও দেখা গিয়েছে। ছবির সংলাপ চরিত্রদের সঙ্গে দর্শকদের সংযোগ ঘটাতে পারে, কিন্তু কোথাও গিয়ে যেন তা হারিয়ে যায়। যেখানে সিনেমাটোগ্রাফির জন্য পরিচালকের প্রশংসা করতে হবে। চারটে গল্পের মাধ্যমে আলাদা আলাদা চরিত্রকে খুব ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছে পরিচালক। সিনেমাটি আড়াই ঘণ্টার ধরে চললেও দর্শকদের ধৈর্য্য হারানোর সম্ভাবনা খুবই কম রয়েছে।