অভঙ্গ-সমাভঙ্গ-‘ত্রিভঙ্গ’ : মুভি রিভিউ

Share This Post

০২১ সালেই ওয়েব দুনিয়ায় প্রথম ডেবিউ ‘ত্রিভঙ্গ’ এ অনুরাগীদের নজর কাড়লেন কাজল। ১৫ই জানুয়ারি নেটফ্লিক্স অরিজিনাল এ মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। পরিচালনায় রয়েছেন রেনুকা শাহানে এবং চিত্রনাট্য ও নিজেই লিখেছেন তিনি। তনভি আজমি ও মিথিলা পালকার এর চরিত্র ও অভিনয় দুই-ই যথেষ্ট প্রশংসনীয়। মুম্বাইয়ের প্রেক্ষাপটে ত্রিভঙ্গ একটি জটিল কাহিনী। একই পরিবারের তিনজন নারীর বাস্তব মুহূর্তগুলি চিত্রনাট্যে দেখানো হয়েছে। তিন প্রজন্মের গল্প বলেছেন রেনুকা। কিন্তু নারীকেন্দ্রিক ছবি বলে অযথা পুরুষদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাননি তিনি। তার বদলে একজন মা মেয়ে এবং দিদিমার জীবন যুদ্ধের কাহিনী বলতে চেয়েছেন তিনি।

অত্যন্ত সাদামাটা মারাঠি ঘরের বউ নয়নতারা আপ্টের(তন্বী আজমি) লেখালিখির পেশা নিয়ে আপত্তি শাশুড়ির। নানান লাঞ্ছনা গঞ্জনা সহ্য করতে না পেরে স্বামীর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসে বছর দশেকের কন্যা অনুরাধা, ছেলে রবীন্দ্র এবং পরিচারিকা মিলন কে নিয়ে শুরু করে সে নতুন সংসার। মায়ের এই সিদ্ধান্তে অনুর মনে তৈরি হয় ক্ষোভ এবং সেই গোপন ক্ষত নিয়ে বড় হতে থাকে ছোট্ট অনু। অনুরাধার বড় বয়সের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় কাজল কে। ছোটবেলায় মাকে প্রেমিকের হাতে যৌন নিগ্রহের ঘটনা দেখার প্রতিক্রিয়া থেকে দীর্ঘদিন কোমায় পড়ে থাকা মাকে বহুদিন বাদে ছোঁয়ার দৃশ্য গুলি অনবদ্য। কুমারী অবস্থায় অনু সন্তানের জন্ম দেয়। অনুর মেয়ে মাশা (মিথিলা পালকার) তার আজ্জি(দিদা) ও আই (মা)- কে কি অনুসরণ যোগ্য মনে করে? আপাত দৃষ্টিতে শান্ত এবং বুঝদার মনে হওয়া মানুষগুলির ভিতরেও যে ঝড় বয়ে যেতে পারে মাশা- র ভূমিকায় তা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন মিথিলা। কোমায় আচ্ছন্ন নয়নকে কেন্দ্র করেই তিন প্রজন্মের একত্রিত হওয়া।

সিরিজে মিলনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন কুনাল রায় কাপুর। তাঁর সঙ্গে কাজলের খুনসুটি দেখতে বেশ ভালোই লেগেছে।ছবির প্রথমে কাজলের উচ্চকিত অভিনয় চোখে লাগে বটে কিন্তু কম সংলাপের চরিত্রে কাজল অনবদ্য। তবে কুণালকে ততটাও স্বতঃস্ফূর্ত মনে হয়নি। বাকি চরিত্রে কনওয়ালজিৎ সিং, বৈভব তত্ত্বাওয়াড়ি, মানব গোহিল নিজেদের চরিত্রের চাহিদা পূরণ করেছেন।

ছবিতে কিছু বৈপরীত্য নজর কেড়েছে। ‘ত্রিভঙ্গ’ মূলত একটি ওড়িশি নৃত্যভঙ্গি। আর ছবিতে অনুরাধাকে একজন ওড়িশি নৃত্যশিল্পীর ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। কিন্তু গোটা ছবিতে একবার পারফর্ম করতে দেখা যায়নি  শুধু নাচের পোশাকে তার ছবির কোলাজ, তার ইমেজকে তুলে ধরেছে। নাচের মুদ্রার প্রসঙ্গ টেনে অনু তার মাকে বলে ‘অভঙ্গ’, মেয়েকে বলে ‘সমাভঙ্গ’, আর নিজেকে বলে ‘ত্রিভঙ্গ’। অথচ তার মায়ের আত্মজীবনীর নাম রাখা হয় ‘ত্রিভঙ্গ’। তাই ‘ত্রিভঙ্গ’ শব্দটি দিয়ে ঠিক কী বোঝানো হয়েছে তা খুব একটা স্পষ্ট নয়। ছবির পাঞ্চলাইনে যে ‘টেরি-মেরি-ক্রেজি’ শব্দবন্ধনী রয়েছে তাও অনুর জন্যই প্রযোজ্য।

পুরোনো-নতুন এর দ্বন্দ্ব রেনুকার ছবির মূল বিষয়বস্তু নয়। নারী যদি তার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয় তবে তাকে তার মূল্যও দিতে হয়। সেই ইচ্ছার সঙ্গে আমৃত্যু সংঘাত চলে নিজের পরিবারের এবং সমাজের। সময়টা ২০২১ হলেও ইচ্ছের সঙ্গে নারীর ঘরে-বাইরের লড়াই চিরন্তন। তাই রেনুকার ছবিতে বারবার বলা হয় ‘চয়েস’ শব্দটি।

নিজের এই কাহিনী নিয়ে প্রথমে মারাঠি ভাষায় ছবি তৈরি করবেন বলে ভেবেছিলেন রেনুকা। কিন্তু দর্শক দের সাথে এই অবিচার করতে চাননি তিনি। সব মিলিয়ে নেটফ্লিক্সের পাওনা বেশ ভালোই।

দীপ্তরুপা সাঁতরা
জন্ম ২৬শে ডিসেম্বর, ২০০০
পশ্চিমবঙ্গের, কলকাতা জেলার অধিবাসী।
বর্তমানে বিদ্যাসাগর কলেজের
সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী।

Share This Post

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore

Do You Want To express your thoughts

drop us a line and keep in touch