Share This Post

Yesterday— বিশ্ববিখ্যাত বিটলস্-এর অন্যতম জনপ্রিয় একটি গান। এই গানের বিষয়ে বিশ্ব ইতিহাসের মিউজিক রেকর্ড বলছে আজ পর্যন্ত সর্বাধিক কভার্ড সং তালিকার প্রথম স্থানে বিরাজমান। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ২২০০ -এরও বেশি কভার করা হয়েছে গানটিকে। বিবিসি রেডিওর ১৯৯৯ -র ভোট অনুযায়ী ‘ইয়েসটারডে’ বিশ্বশতাব্দীর শ্রেষ্ঠ গান হিসেবে বেছে নিয়েছে শ্রোতা ও সঙ্গীত শিল্পীমহল। এছাড়া রোলিং স্টোন ম্যাগাজিন বলেছে ‘ইয়েসটারডে’ সর্বকালীন শ্রেষ্ঠ পপ সঙ্গীত। শুধুই কি এ গানের খ্যাতি এখানেই থামে!

Yesterday —নিয়ে শুধু সাধারণ শ্রোতা এবং সঙ্গীতশিল্পীরা নয়, বিশ্ব সাহিত্য এবং সিনেমা জগতকেও ভীষণ ভাবে প্রভাবিত করেছে। জাপানের সবচেয়ে জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক হারুকি মুরাকামি  তার বিখ্যাত ছোটগল্প ‘ইয়েসটারডে’ বিটলস্-এর বিখ্যাত গান ‘ইয়েসটারডে’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই লিখেছেন। এই ছোটগল্পের শুরুতেই তিনি লিখছেন — Yesterday / Is two days before tomorrow / The day after two days ago.

অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী পরিচালক Danny Boyle ২০১৯ -এ ‘ইয়েসটারডে’ নামক একটি সিনেমা তৈরি করেন। সিনেমাটা বিটলস্-এর ‘ইয়েসটারডে’ গানটাকে নিয়ে এবং একজন সাধারণ সঙ্গীতশিল্পীর জীবনকে তুলে ধরেছে পর্দায়। এই সিনেমায় মুখ্য চরিত্রে Himesh Patel অভিনয় করেছে এবং সিনেমায় ব্যবহৃত ‘ইয়েসটারডে’ গানটি ওঁর গলায় রেকর্ড করা হয়েছে। সিনেমার বিশেষ চমক হিসেবে সঙ্গীতশিল্পী  Ed Sheeran অভিনয় করেছেন। যেমন সিনেমায় বিটলস্-এর বেশ কিছু গান ব্যবহার করা হয়েছে পাশাপাশিEd Sheeran নিজস্ব গান ব্যবহার হয়েছে। সব থেকে মজার বিষয় হল, সিনেমায় Himesh Patel অর্থাৎ ‘বিটলস্’ আর Ed Sheeran-এর মধ্যে ১০ মিনিটের মধ্যে একটা গান তৈরি করবার প্রতিযোগিতা হয়। কিন্তু কে জিতল এই প্রতিযোগিতা জেনে নিতে হবে সিনেমাটি দেখে। সিনেমার মুখ্য চরিত্র জ্যাক অবশেষে জন লেননের সাক্ষাৎ পায়। সিনেমা অনুয়ায়ী জন লেনন তখনও জীবিত শুধু নিজেকে বিছিন্ন করেছে মানুষের ভিড় থেকে। সব খ্যাতি আস্তাকুঁড়ে ফেলে সাধারণ জীবনযাপন করছেন লেনন। পরিচালক লেননকে দিয়ে কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলিয়ে নিয়েছে — There were complications, young Jack. Loss and gain. Prejudice and pride. But it all turned out just fab.

এবার আস্তে আস্তে গানের অতীতে ফিরে গেলে দেখা যায় এই গান জুড়ে অজস্র মজার ঘটনা আছে। Yesterday—গানের প্রথমে নাম ছিল Scrambled Egg’, পরে নাম পরিবর্তন করে ‘ইয়েসটারডে’ করা হয়। এই গানের রেকর্ডিং নিয়ে রয়েছে কিছু মজার ঘটনা। ১৪ই জুন ১৯৬৫ সালের এক বিকেলে Abby Road-এর ই.এম.আই স্টুডিওতে বিকেলে দু’টো গান রেকর্ড করা হয়। প্রথমে  ‘I’ve Just Seen A Face’ আর তারপর  ‘I’m Down’। এই দু’টো গান রেকর্ড করার পরে রাত ৭টা থেকে ১০টার মধ্যে রেকর্ড করা হয় কালজয়ী গান ‘ইয়েসটারডে’। গল্প এখানেই শুরু। গানের সুর ও কথা পল ম্যাককার্টনির। তাই প্রথমে পল একটা স্টিল স্ট্রিং গিটার নিয়ে একা গানটা গায়। গানটা শোনার পর বিটলস্-এর ড্রামার রিঙ্গো স্টার বলে এই গানে ড্রাম সংযোজন করার কোনো মানে হয় না। সম্মতি জানায় লেনন আর হ্যারিসন। জর্জ হ্যারিসন বলেন, এখানে আরও একটা গীটার ব্যবহার করার কোনো ভিত্তি নেই। পলের চক্ষুস্থির! বিটলস্-এর গান অথচ বিটলস্-এর কেউ বাজাবে না?! পল ম্যাককার্টনি একা একটা স্টিল স্ট্রিং গিটার বাজিয়ে নিজে গাইবে! বিটলস্-এর প্রডিউসর জর্জ মার্টিন পলকে এককভাবে রেকর্ড করতে বলে। এটাই বিটলস্-এর প্রথম একমাত্র একটা গান যেটাকে পল ম্যাককার্টনি এককভাবে রেকর্ড করে—ইয়েসটারডে! ১৩ই সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ সালে মুক্তি পায় ‘হেল্প’ অ্যালবাম। ‘হেল্প’ অ্যালবামের অন্তর্ভুক্ত করা হয় ‘ইয়েসটারডে’। ৮ই মার্চ ১৯৭৬ সালে গানটিকে আবার সিঙ্গেল হিসেবে রিলিজ করা হয়। তখনও গানটি টপ টেন চার্ট লিস্টে ৮ নং গান হিসেবে ট্রেন্ডিং-এ থাকে। সমালোচনা হলেও অনেকেই মনে করে ‘ইয়েসটারডে’ বিটলস্-এর সর্বাধিক লোকপ্রিয় এবং শ্রেষ্ঠতম গান।

আরও পিছিয়ে গেলে এই গানের জন্ম জানা যায়। পল ম্যাককার্টনি Wimpole Street-এ প্রেমিকা অর্থাৎ  অভিনেত্রী Jane Asher-এর বাড়িতে থেকে গেছিলেন। হঠাৎ পলের ঘুমের মধ্যে অবচেতন মনে একটা সুর ভেসে ওঠে। এবং অবচেতন মন সুরটাকে চেতন মনকে পাঠায়। পল ম্যাককার্টনি ঘুম থেকে উঠে কোনোমতে পিয়ানোর কাছে গিয়ে বাজানো শুরু করে। পিয়ানোর কি-গুলো হাতড়াতে হাতড়াতে প্রথমে ছুঁয়ে দেখে G, ওখান থেকে পৌঁছে যায়  F sharp seven, আবার ওখান থেকে B, তারপর E minor, অবশেষে ফিরে আসে G তে। তবে এই সুর বাঁধার পরেও পল নিজেকে বিশ্বাস করেনি। আদৌ কি এটা ওর নিজের সুর! কারণ অবচেতন থেকে আসা সুর; বলা মুশকিল! হয়তো আগে কোথাও শুনেছে, এখন সেটা নতুন করে ভেসে উঠেছে। তাই আগামী একমাস পল সঙ্গীতের বাণিজ্যিক কারণে যেখানেই গেছে সবাইকে এই সুর শুনিয়ে জিজ্ঞেস করেছে, ‘এটা কি চেনাপরিচয় সুর মনে হয়?’— সবাই অপরিচিত সুর বলে ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ এটা পলের নিজস্ব সুর।

সুরের পালা তো শেষ হল, এবার কথার কি হবে! পল চিন্তিত অবস্থায় পড়ে রইল। যাই লিখছে, ভালো লাগছে না। পল বলেছে, গানটা বিটলস্-এর চতুর্থ ফ্রান্স ট্যুরে খালি সময়ে বসে লেখে গানটা। কিন্তু তখনও গানের নাম ছিল, Scrambled Egg সাধারণত, বিটলস্-এ পল আর লেনন একসাথে বসে গান লিখত। কিন্তু ইয়েসটারডে পল একা লিখেছিল। জন লেনন বলেছিল গানের নামটা এক শব্দের হলে ভালো হয়। এরই মাঝে  Help’ অ্যালবামের জন্য শুটিং শুরু হয়ে যায়। তখন শুটের সময় স্টেজে একটা পিয়ানো রাখা ছিল। পল সব সময় পিয়ানোতে বসে Scrambled Egg গানটা গাইত। Help– এর ডিরেক্টর Richord Lester বিরক্ত হয়ে বলে — ‘তুমি গানটা শেষ কর, না হয় ফেলে দাও। আমি নাহলে পিয়ানোটা স্টেজ থেকে নামিয়ে দেব।’ পল উঠে যায়।

শুট শেষ হল। পল আর ওর প্রেমিকা গরমের ছুটি কাটাতে বন্ধুর বাড়ি Portuguese villa -তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। প্রায় ১৩০ মাইল রাস্তা গাড়িতে। এতটা দূরত্ব পল আগে কখনও গাড়িতে কাটায়নি। ফলে তখন পলের মাথায় আসে —

Scram-ble-d eggs, da-da da’. I knew the syllables had to match the melody, obviously: ‘da-da da’, ‘yes-ter-day’, ‘sud-den-ly’, ‘fun-il-ly’, ‘mer-il-ly’, and ‘yes-ter-day’, that’s good. ‘All my troubles seemed so far away.’ It’s easy to rhyme those ‘a’s: say, nay, today, away, play, stay, there’s a lot of rhymes and those fall in quite easily, so I gradually pieced it together from that journey. ‘Sud-den-ly’, and ‘b’ again, another easy rhyme: e, me, tree, flea, we, and I had the basis of it.’

আর এভাবেই গানটা পুরোপুরিভাবে তৈরি করল পল। Lesbon থেকে ফেরার সময় এয়ারপোর্টে বন্ধুর কাছে গীটার চেয়ে গানটা শোনায়। গানটি অসাধারণ ভাবে ফুটে উঠেছিল। লেননের তবুও লিরিক্স নিয়ে একটু আপত্তি ছিল কারণ লিরিক্সে এমন কিছু লাইন রয়েছে যার কোনো সূত্রপাত নেই, কিছু প্রশ্নের উত্তর নেই। অনেকেই বলে গানটা প্রেমিকার জন্যে লেখা আবার অনেকেই বলে পলের অল্প বয়েসে মৃত মায়ের জন্য লেখা।

   ১৯৬৫ সালে জুন মাসের এক সোমবার পল আর প্রোডিউসর জর্জ মার্টিন গানটা অ্যারেঞ্জ করে। মার্টিন বলে, শুধু গিটার থাকুক আর কিছুর দরকার নেই। অবশেষে মার্টিনের বাড়িতে গানটা অ্যারেঞ্জ করা হয়৷ তারপর Abby Road -এর EMI Studio- তে রেকর্ড করা হয়। ১৩-ই সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ সালে গানটা ‘Help’ অ্যালবামে জায়গা পায়। অদ্ভুত সব অভিজ্ঞতা মিলিয়ে তৈরি হয় ‘ইয়েসটারডে’। অসাধারণ এই গান মানুষের বুকে এভাবে গেঁথে গেছে যে এ গানের ইতিহাস নিয়ে এখনও লেখা হয়। কথা বলা যায়। ভাবা যায়। ভালোবাসা যায়। তবুও ফুরিয়ে যায় না। ২মিনিট ৫ সেকেন্ডের একটা গান। অনন্তকাল প্রতিটি প্রজন্মের কানে লুপে চলবে।

   Oh, I believe in yesterday — ১১  লাইনের গানের কথাগুলো আমাদের স্মৃতির সুখচরে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে। জীবনের সব স্মৃতিগুলো গতকাল ঘটে গেছে মনে হতে পারে। তাই পল ম্যাককার্টনি বিশ্বাস করেছিল গতকালে। মাদার ম্যারির কথায় — Let it be.

লেখক পরিচিতি: বিশ্বরূপ হাওলাদার
POET/WRITER/LYRICIST

Share This Post

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore

Do You Want To express your thoughts

drop us a line and keep in touch