পুলিৎজার পুরস্কার প্রাপ্ত আর্নেস্ট হেমিংওয়ে(Ernest Hemingway)

Share This Post

পুলিৎজার পুরস্কার প্রাপ্ত আর্নেস্ট হেমিংওয়(Ernest Hemingway)

১৯৫৩ সালে উপন্যাস “The old man and the sea” জন্য পুলিৎজার পুরস্কারে পুরস্কৃত হন Ernest Hemingway (আর্নেস্ট হেমিংওয়ের)। এরপর একের পর এক চমৎকার উপন্যাস তিনি জনসাধারনকে উপহার দিয়েছিলেন।

Ernest Hemingway(আর্নেস্ট হেমিংওয়ের)জন্ম:

ডাক্তার ক্লারেন্স হেমিংওয়ে আর গায়িকা গ্রেস হেমিংওয়ের শিকাগোর ওক পার্কের বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন আর্নেস্ট, ১৮৯৯ সালে।
ছোটবেলা থেকেই তাঁর ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি আলাদা টান ছিলো। ওক পার্ক এন্ড রিভার ফরেস্ট হাই স্কুলে তাঁর হাতেখড়ি হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি বক্সিং, ওয়াটার পোলা কিংবা ফুটবল খেলতে তিনি বেশ উৎসাহিত থাকতেন। একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবে, তিনি অন্য কারো থেকে কোন অংশে কম ছিলেন না।

তাঁর উপন্যাস জীবনে প্রথম পদক্ষেপ:

স্কুল জীবনে ছোটখাটো লেখা তিনি শুরু করেছিলেন। মার্ক টোয়েন, স্টিফেন ক্রেইন ও সিনক্লেয়ার লুইস এর মতন বিখ্যাত সাহিত্যিকদের মতো তাঁরও লেখালিখি যাত্রা শুরু হয় সাংবাদিক হিসেবে। স্কুলে পড়ার সময় সংবাদপত্র “ট্রাপিজি অ্যান্ড টাবুলা”(Trapaze and Tabula) তে লেখালেখি শুরু করেন খেলাধুলার সম্পর্কে। পরবর্তীকালে তিনি সাংবাদিক হিসাবে যোগ দেন ‘ক্যানসাস সিটি স্টার পত্রিকায়’। তাঁর জীবনের লক্ষ্য অথবা বলা যায় জীবনের মূল স্রোতের কিনারা নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল এই সাংবাদিক পেশা।’ক্যানসাস সিটি স্টার পত্রিকা’থেকেই তাঁর উপন্যাস জগতের ভিত গড়ে ওঠে। এই অভিজ্ঞতার কথা তিনি তুলে ধরেছিলেন জনমানুষের কাছে, সেখানে তিনি জানান-
“On the Star you were forced to learn to write a simple declarative sentence. This is useful to anyone. Newspaper work will not harm a young writer and could help him if he gets out of it in time.”

    পরবর্তীকালে তিনি ১৯৩৭ সালে রিপোর্টার হিসেবে কাজ শুরু করেন স্প্যানিশ সিভিল ওয়ারে। সেখানে তিনি আরও একটি বিখ্যাত উপন্যাস জনসাধারণের জন্য উপহার দেন নাম তার- "For whom the bell tolls"। প্রথমত ১৯৫৩ সালে উপন্যাস "The old man and the sea" পুলিৎজার পুরস্কার জিতেছিল , তারপর আবারও দ্বিতীয় বারের মতন উপন্যাস " For whom the bell tolls"জন্য পুলিৎজার পুরস্কারে মনোনীত হন।

হোমিংওয়ের ব্যক্তিগত জীবন:

হোমিংওয়ের ব্যক্তিগত জীবন ছিল বেশ জটিল। সমাজ সেবায় মানুষের পাশে দাঁড়ান তিনি, আর সেই সময় তাঁর আলাপ হয় এক নার্সের সাথে নাম এগনেস ভন করোস্কি। ঘটনাচক্রে এই নার্সের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে হোমিংওয়ের। মাত্র কুড়ি বছর বয়সের যুবক ছিলেন তখন তিনি। আর পাঁচটা প্রেমিকার মতন তিনিও বিয়ের স্বপ্ন দেখেন। কথা ছিল ১৯১৯ সালে জানুয়ারি মাসে আমেরিকায় গিয়ে বিয়ে করবেন তাঁরা। কিন্তু তিনি আমেরিকাতে অপেক্ষা করতে থাকলেও এগনেস আর ফিরলেন না। কিছুদিন পরেই প্রত্যাখ্যান চিঠি এসে পৌঁছায় আমেরিকায় হোমিংওয়ের কাছে। সেখানে তিনি স্পষ্ট ভাবে জানান, তার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে ইটালিয়ান কর্মকর্তার সাথে।
আর পাঁচটা ব্যর্থ প্রেমিকের মতন হোমিংওয়ের সব স্বপ্ন ব্যর্থ হয়ে যায়। আর এই আবেগ থেকে আরেকটি উপন্যাসের জন্ম -নাম তার ‘এ ফেয়ারওয়েল আর্মস’ ।
কিন্তু ভাগ্যের চাকা ঘুরল ,তিনি সাংবাদিকতা করতে করতে ভালো লেখকেও পরিচিতি লাভ করলেন। তারপর তাঁর জীবনে আবার নতুন করে প্রেমের আবির্ভাব ঘটে। এলিজাবেথ হেডলি রিচার্ডসন এর সাথে হোমিংওয়ের বিয়ে হয়।
তবে এবারেও এই সম্পর্ক টিকলো না বেশিদিন, কারণ তিনি আবার প্যারিসে এসে আমেরিকান সাংবাদিক পলিন পাইফার এর প্রেমে পড়েন। তার পরেই তিনি ১৯২৭ সালে রিচার্ডসন কে ডিভোর্স দিয়ে বিয়ে করেন পলিন পাইফার কে।
কিন্তু এখানেই তিনি থেমে থাকেননি বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন স্প্যানিশ সিভিল ওয়ার রিপোর্টার হিসেবে যোগদান করেন হেমিংওয়। সেখান থেকে আলাপ মার্থা গেলহর্ন নামক সাংবাদিকের সাথে। আর তাঁরই অনুপ্রেরণায় তিনি বিখ্যাত রচনা ‘ফর হোম দ্যা বেল টুলস’ উপন্যাস লেখেন। যা পরবর্তী উপন্যাস জগতে এক বিখ্যাত রচনা। এই সাংবাদিকের সাথে আবারো তিনি সম্পর্কে আবদ্ধ হন, যার ফলে তার সংসারে ভাঙ্গন ডেকে আনে। পরবর্তী সময়ে তিনি পলিন কে ডিভোর্স দিয়ে সাংবাদিক মার্থা কে বিয়ে করেন।
মার্থা কে নিয়ে ১৯৪০ সালে তিনি চলে আসেন কিউবাতে। সেখানে ছিল হেমিংওয়ের একটি বাগান বাড়ি। সমুদ্রের মাঝখানে তিনি শিকারে বেশ মেতে উঠেছিলেন। ১৯৪১ সালে যখন জাপান চীন যুদ্ধ চলে তখন হেমিংওয় যুদ্ধের খবর সংগ্রহের জন্য চলে যান। কিন্তু পরবর্তীকালে সংবাদ গ্রহণের জন্য ইউরোপে এসে হেমিংওয়ের সাথে আলাপ হয় টাইম ম্যাগাজিনের সাংবাদিক মেরি ওয়ালেসের সাথে। সেখান থেকে বাসা বাঁধে তাদের নতুন সম্পর্ক। তিনি ১৯৪৫ সালে মার্থাকে ডিভোর্স দেন এবং বিয়ে করেন মেরি ওয়েলেস কে।

     বারংবার তারে বিয়ে নিয়ে প্রচুর জল্পনা-কল্পনা সৃষ্টি হয়। সেখানে তিনি জানিয়েছিলেন -

‘Funny how it should take one war to start a woman in your damn hard and other to finish her. Bad luck’

হেমিংওয়ে

অবদান:

উপন্যাস বা সাহিত্য জগতে হোমিংওয়ের অবদান সত্যি অনেকখানি গুরুত্বপূর্ণ।
‘দ্যা ওল্ড ম্যান এন্ড দ্যা সি’থেকে শুরু করে তিনি ‘ফর হোম দ্যা বেল টলস’, ‘ম্যান উইথ আউট ওমেন’ – নামক একের পর এক উপন্যাস লেখেন। এই তিনটি উপন্যাসের জন্য তিনি পুলিৎজার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। এছাড়াও তিনি খেলাধুলা, সমাজসেবা এইসব নিয়ে লেখালেখি করেন। অন্যদিকে ১৯৪৫ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।
শুধুমাত্র তিনি লেখালেখি সাথে যুক্ত ছিলেন তাই নয়, বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন তিনি সমাজসেবার কাজেও মনোনীত হন। তিনি নিজে এম্বুলেন্স চালিয়ে রোগীদের পাশে দাঁড়ায়। পাশে দাঁড়ায় দেশের মাটি রক্ষার্থে। সেই সময় তিনি সাংবাদিকতার পাশাপাশি নিজের মনুষ্যত্ববোধকে ফুটিয়ে তোলেন।

পারিবারিক সমস্যা:

১৯২৮ সালে হোমিংওয়ের বাবা ক্লারেন্স হেমিংওয়ে আত্মহত্যা করেন। বাবার মৃত্যুর পর স্বাভাবিকভাবে তিনিও একটু নিজেকে গুটিয়ে ফেলেন‌। হাজার চেষ্টা করার পরও তিনি সেইখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি হয়তো।
তাঁর বাবার মৃত্যুর পর হোমিংওয়ের জীবনের বিশাল পরিবর্তন ঘটে। বহুবার তিনি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পায়। নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় হোমিংওয়ের জীবন।
এইসব এর মধ্যে দিয়েও তিনি লেখালেখি চালিয়েছেন। উপন্যাস জগতে তাঁর আরেকটি বড় অবদান হল- ‘এ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস’ ,যে উপন্যাসটি বিশ্বজুড়ে প্রচুর খ্যাতি লাভ করে।
কিন্তু তিনি তাঁর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মনে হয় একটু বেশি ভেঙে পড়েছিলেন। তিনি বার বার তাঁর শ্বাশুড়ীকে বলতেন- তিনিও একই পথে হাঁটছেন (I will probably go the same way).

শেষ জীবন:

হেমিংওয়ের বাবার মৃত্যুর পর তিনি তাঁর জীবনের মূল স্রোতের কিনারা হারিয়ে ফেলেছিলেন। অতিরিক্ত নেশাগ্রস্ত হয়ে যাওয়ার ফলে তাঁর শরীরে নেমে আসে নানান ব্যাধি। “বাইপোলার মোড ডিসঅর্ডার”-রোগে আক্রান্ত হন তিনি। জানা যায় তাঁদের বংশগত ভাবে এই রোগ বর্তমান। এর দুটি দিক থাকে- এক থাকে অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস যাকে আমরা বলে থাকি ম্যানিক কন্ডিশন। আর অন্যদিকে থাকে ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা।
সহজ সরল উপন্যাসিক মনোভাব নিয়ে মেতে থাকা মানুষটির মধ্যে কখন যে এই ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা বাসা বেঁধেছিল তা বোঝাই যায়নি। তিনি তাঁর বাবা ও বোনের মতন কখন সেই একই মানসিক অবস্থায় চলে গিয়েছিলো তা অজানায় থেকে গেছে। ৬২ বছর বয়সে তিনি পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নেয়। ২-ই জুলাই ১৯৬১ সালে উপন্যাস জগতের এক নক্ষত্রের পতন ঘটে।
তবে তাঁর মৃত্যুর সঠিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিনি নিজের শটগানের সাহায্যে আত্মহত্যা করেন। তাঁর চিকিৎসক ও বন্ধুদের কাছ থেকে জানা যায় যে, তিনি মৃত্যুর আগে তার বাবা বোন ও ভাইয়ের মত একই আচরণ করতেন। এর থেকে প্রমাণ তিনি বাইপোলার মোড ডিসঅর্ডার এর মতন রোগে সত্যিই আক্রান্ত ছিলেন। যদিও পরে চিকিৎসকরা নিজেই বলেছিলেন উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খেতে তিনি।তাঁর স্ত্রী জানান, তিনি তাঁর শটগান পরিষ্কার করছিলেন। ইতিমধ্যে তিনি যে এরকম কাজ করে ফেলবেন সেটি বোঝাই যায়নি।
সকল তথ্য থেকে এটি শুধুমাত্র অনুমান করে নেওয়া হয়েছিল যে ,তিনি নিজেই আত্মহত্যা করেছেন।

হেমিংওয়ের মৃত্যুর খবর

আর্নেস্ট হেমিংওয়ের স্মরণীয় উক্তি:

১)আমার জানামতে সবচেয়ে দুর্লভ ব্যাপার হচ্ছে বুদ্ধিমান মানুষকে সুখী হতে দেখা।(Happiness in intelligent people is the rarest thing I know.)
২)মানুষ পরাজিত হওয়ার জন্য তৈরি হয়নি। মানুষকে ধ্বংস করা যায় কিন্তু পরাজিত করা যায় না।(But man is not made for defeat. A man can be destroyed but not defeated.)
৩)সব মানুষের জীবনের সমাপ্তিটা একই রকম। কেবল সে কিভাবে জীবন কাটিয়েছে এবং কিভাবে মারা গেছে তাই তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে রাখে।
(Every man’s life ends the same way. It is only the details of how he lived and how he died that distinguishes one man from another.)

Share This Post

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore

Do You Want To express your thoughts

drop us a line and keep in touch