ওঁ জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীণা রঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।
ছেলেবেলা থেকেই এই মন্ত্রটা শুনে শুনে প্রায় সকলেরই মুখস্ত হয়ে গেছে এখন। সেই প্রথমবার মা সরস্বতীর সামনে বসে হাতে খড়ির কথা মনে না থাকলেও,আবছা ভাবে অনেক কথাই মনে আছে এখনও। সকাল বেলা মা হলুদ মাখিয়ে স্নান করিয়ে নতুন জামা পড়িয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে দিত।।বাড়ির পুজোয় অঞ্জলী দিয়ে,অপেক্ষা করতাম প্রসাদ পাওয়ার । ভোগ প্রসাদের থেকে ফলপ্রসাদের দিকেই নজর টা থাকতো।বিশেষ করে কুলের দিকে।সরস্বতী পূজার আগে কুল খেলে যদি মা রাগ করেন!!!যদি ভালো নাম্বার না দেন!!!এই ভয়ে তীব্র লোভ সম্বরণ করেও,অপেক্ষা করতাম পূজা শেষ হবার। পুজো শেষ হলে কিছু ফল প্রসাদ খেয়ে প্রত্যেক বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রসাদ দিয়ে আসতাম, আর পাড়ার বাকি বাড়ির প্রসাদ আসার অপেক্ষায় থাকতাম। প্রত্যেক প্রসাদের থালা থেকে পছন্দের ফল গুলো খেয়েই স্কুলের পথে রওনা হতাম। বাড়ির পুজোয় অঞ্জলী দেওয়ার পড়েও,আরেকবার স্কুলে গিয়ে অঞ্জলী দিতাম। না জানি কি কি পাপ করেছি!!মাকে সন্তুষ্ট রাখা ভালো,এই ভেবেই হয়তো আরেকবার অঞ্জলী দিয়ে দিতাম। তারপর বন্ধুদের সাথে আশেপাশের স্কুল ঘুরে,দুপুরে বাড়ি ফেরা। তারপর বিকেলে পাড়ার প্যান্ডেলে গান চালিয়ে সে কি নাচ!! সন্ধায় বড়দের জন্য বিভিন্ন খেলার আয়োজন থাকতো। হাঁড়ি ভাঙ্গা,মিউজিক্যাল চেয়ার,মোমবাতি জ্বালানো,আরো কত কি!
সময়ের সাথে সাথে আমরাও হটাৎ করে একদিন বড়ো হয়ে গেলাম। জীবন সম্পর্কে নানারকম চিন্তা বাড়ার সাথে সাথে ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্কের মত কমতে শুরু করলো সরস্বতী পূজার আনন্দটা…
আজও একই রকম উদ্যোগ নিয়ে স্কুলে আয়োজন হয়,একই রকম ভাবে পাড়ায় গান চলে,একই রকম ভাবে পাড়ার বয়োজ্যেষ্ঠ রা মেতে ওঠেন আনন্দে।কিন্তু এই সব কিছুর মধ্যে,পাবজি মোবাইলের প্রতি আকর্ষণে, প্রেমের খোঁজের মাঝে কোথায় যেন ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাচ্ছে ছেলেবেলার আনন্দগুলো…
সৌভিক দাস
বর্তমানে মহারাজা মনীন্দ্র চন্দ্র কলেজের সাংবাদিকতা ও
গণজ্ঞাপন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র