কাল রাত থেকে মায়ের জ্বর। আজ সারাদিন জয়ীর পড়াতে যাওয়া ছিলো, তার মাঝে সময় করে ওষুধ কিনে আনাও হয়নি। সারাজীবন টা একাই সব দিক সামলেছে মা। একা হাতে জয়ীকে মানুষ করেছে। কোনোদিনও কিছুর অভাব বোধ হতে দেয়নি মা । সংসার এর হাল এখন জয়ীর হাতে। অনেক টা রাত হয়ে গেলো। মোড়ের মাথায় ওষুধের দোকান টা খোলা থাকে সারারাত।
মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জয়ী বললো,,
– তুমি একটু অপেক্ষা করো মা , আমি 30 মিনিটের মধ্যেই ফিরে আসছি তোমার ওষুধ কিনে
– আমি ঠিক আছি রে মা। আজ এত রাতে আর যেতে হবেনা। কাল সকালে যাস।
– এমনিই সারাদিন সময় পাইনা মা। পড়াতে না গেলে যে মাইনে দেবেনা ওরা। সবজিপাতিও তো কিনতে হবে। আমার বেশিক্ষণ লাগবে না মা। চিন্তা করোনা মা।
রাত ১০:৩০ টা বাজে। আর দেরি না করেই বেরিয়ে পড়লো। ওষুধ কেনাও হলো। একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে হবে। তাই shortcut রাস্তা নিল কবরখানার পাশ দিয়ে। লোকে বলে,এই পথটা নাকি সুবিধার না।অনেকেই রাতের বেলা অনেক ভৌতিক ঘটনা লক্ষ্য করেছে। রাত হলেই নাকি ভূতেদের আড্ডাখানা হয় এই রাস্তাটা।অনেকেই অনুভব করেছে,কিছুটা হাটবার পরেই কেউ বা কারা তাকিয়ে থাকে রক্ত চোখে।অনেকে ভয় পেয়ে শরীর খারাপও করেছে নাকি। যত আজগুবি গল্প সব!ভূত আবার হয় নাকি।কিন্তু হঠাৎ জয়ীর মনে হতে লাগলো,,,সত্যিই কয়েক জোড়া পা তাকে অনুসরণ করছে।জয়ী পায়ের গতি বাড়ালো।কিন্তু এটাও বুঝতে পারলো,তার পিছনে এগিয়ে আসা পায়ের শব্দেরও গতি বেড়েছে। তাহলে কি সত্যি সত্যি ভূত বলে কিছু হয়??কিন্তু এসব ভাবার সময় নেই জয়ীর। অন্য একটা ভয় এখন তাকে চেপে ধরেছে।প্রাণ পণে ছুটতে শুরু করলো সে।কিন্তু কিছুটা যেতে না যেতেই, হোচট খেয়ে পড়ে গেলো মাটিতে।মাথায় হালকা চোট অনুভব করতে না করতেই সে বুঝতে পারলো,তার ওড়নায় টান পড়লো। কিছু শরীরী জানোয়ার ঝাঁপিয়ে পড়লো জয়ীর ওপর।তীব্র আর্তনাদের সাথে একটু একটু করে যেন জয়ীর প্রাণ পাখি,খাচা ছাড়ার উপক্রম করছে। কবরখানার অন্ধকারে মিশে যেতে থাকলো জয়ীর আর্ত কণ্ঠস্বর।শেষ নিশ্বাস বেরোনোর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত, তার মনে একটাই প্রশ্ন বার বার আসছিল…আজ কোনো ভূত কেন এলো না?কেন এলো না ওকে বাঁচাতে?ওরা এলো না বলে, আজ এক ফুল পরিপূর্ণ ভাবে ফুটবার আগেই ঝরে গেল ।।
সৌভিক দাস
বর্তমানে মহারাজা মনীন্দ্র চন্দ্র কলেজের সাংবাদিকতা ও
গণজ্ঞাপন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র