কলেজ করিডোরের আড্ডা

Share This Post

কতদিন হয়ে গেল নেই সেই করিডোরে ছুটে চলা আওয়াজে ক্লাস রুমে গিয়ে বলা, “আসবো স্যার ?” মাঝে মধ্যেই মনে পড়ে কথা গুলো অবশ্য। কেমন জানি দিন গুলো সব হারিয়ে গেল।
সেই দিন একটা ছোট্ট দরকারে গিয়েছিলাম কলেজে। বোনের কলেজে ভর্তির কিছু কাজে ফাঁকা সেই করিডোরে একেবারে দমবন্ধের জের। নেই জেনারেলের ক্লাস করার তারা, নেই কোনো ভালো লাগার মানুষকে দেখার জন্য দাঁড়িয়ে থাকার অপেক্ষা। করিডোরের আওয়াজে ক্লাস থেকে বেরিয়ে এসে বর্ণালী ম্যামের বকুনিটিও আজ ঠোঁটে হাসির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে । সবটাই যেন একটা সাদা-কালো অথচ রঙিন স্বপ্ন। অনেকেরই আড্ডা মানেই কলেজ ক্যান্টিন হলেও আমাদের কাছে ছিল সেটা করিডরের আড্ডা। সেই দিনই তো কতটাই না বকুনি খেয়েছিলাম এই করিডোরেই ডিপার্টমেন্টের একেবারে সামনে। যে গোটা কলেজ এক মুহূর্তের জন্য থমকে গিয়েছিল আমার কাছে। সে কান্না-কাটির এক শেষ।
-“তবে ?”
এগুলোই তো আসল স্মৃতি। পরের ক্লাসের অপেক্ষা হোক কিংবা পর পর হওয়া ক্লাসের পর একটা ছোট্ট ব্রেক। তখন এই করিডোরটিই ছিল আমাদের প্রধান ঠেক। ক্লাস শেষে স্যারের সাথে কথা হোক কিংবা বন্ধুদের থেকে নোটসের বায়না, সবটাই এখানে করা হত। বাইরে যাওয়া হত না বলা একেবারেই ভুল। সেটা হতো অফ ক্লাস বা ক্লাস ছুটির পর। কলেজের বাইরের অক্ষয় দার সুন্দরী চা আর সিগারেট ছিল আলাদাই নস্টালজিক। কিন্তু কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে আসল ভালোবাসা কেবলই সেই কলেজ করিডোর।
     পড়াশোনা ছাড়াও ‘বন্ধুত্ব’ কলেজের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে। কেবল কলেজের ক্ষেত্রেই নয় স্কুলে ফাঁকা করিডোরে আজও খুঁজে পাওয়া যায় শৈশবের ছাপ। ক্লাস শেষ মানেই করিডোরে গিয়ে আড্ডা এবং কোনো কারণ ছাড়াই ছোটাছুটি। যদিও তার পর ক্লাস মনিটারের লেখা নামের মাশুল দিতে হতো হাতের তালু গুলোকে। কিংবা কখনও ডাক পড়ত সোজা টিচার্স রুমে।
তাতেই বা কি যায় আসে? আবার কিছু দিন বন্ধ থাকার পর সেই একই কান্ড ঘটতে শুরু করে।
     অফ পিরিয়ড এ অন্য রুমের দরজায় টোকা দিয়ে পালিয়ে যেতে গিয়ে ধরা পড়া কিংবা পরীক্ষা শুরুর আগে নিজের রুমের সামনের করিডোরে দাঁড়িয়ে হাত গোনা কে আসতে চলেছেন আমাদের হলে, সেটা ভেবে ঠাকুরের মন্ত্র জপ্ করা । কতই না স্মৃতি। কতই না সুন্দর ছিল দিনগুলো।
    তবে হারিয়ে যাওয়া বন্ধু গুলোকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তারা এখন ব্যস্ত , তাদের নিজেদের কলেজের স্মৃতি বাঁধতে। তাছারও নতুন সব ট্রেন্ড গুলোতে কেমন যেন সব মিথ্যা মিথ্যা ভাব। কেবল ভালো আছি দেখানোর প্রচেষ্টা মাত্র। ওপার থেকে ভেসে আসে না আর, “এই স্যার আসছে স্যার আসছে” শব্দ গুলো। আড্ডায় বাজে না গিটার এবং ঝালমুড়িতেও এখন কেমন যেন অবিশ্বাসের ছোঁয়া। আড্ডার মাঝে প্রফেসররা বলেন না, “কিরে তোরা যাসনি এখনো? যাসনি যেকালে ভেতরে আয় আর কেউ একজন গিয়ে চা বলে আয়!” ক্লাসের সামনে করিডোরে দাঁড়িয়ে থেকে আড্ডা দেওয়ার ভালো দিকটা ছিল এটা। স্যারেদের সাথে ডিপার্টমেন্টে আড্ডা ও চা। তবে এই চা এর পুরো বিল টাই স্যার নিজেই দিতেন। সিনিয়রদের সাথে সময় কাটানোর এবং টুকটাক ভাব বিনিময়ের এক আলাদা স্বাদ পাওয়া যেত কেবল এই করিডোরেই। নতুন বন্ধুত্ব গড়ে তোলার চেষ্টা কিংবা ভালো লাগা মানুষের সাথে কথা বলবার বাহানায় কতই না আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হতো এই করিডোরে, তবে শেষমেশ বলতেই না পাড়ায় নিরাশায় পরিণত হতো সমস্ত আকাঙ্ক্ষা। তবে সে নিরাশার কোনো দুঃখ ছিল না, আগের দিনের অপেক্ষা সমস্ত দুঃখকে ছুঁড়ে ফেলে দিত দৈনন্দিন জীবনের  অভ্যাস গুলির থেকে বহুদূর। আসর বসতো আবারও, সেই করিডোরেই! প্রতীক্ষার আসায় কিংবা বন্ধুত্বের জেরে। স্বার্থপরতা কে দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে।

সানি বাগ
সল্টলেক, উত্তর ২৪ পরগণা জেলার অধিবাসী।
জন্ম ৩রা জুন, ২০০১
শেঠ আনন্দরাম জয়পুরিয়া কলেজ-এর দ্বিতীয় বর্ষের
সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের ছাত্র।

Share This Post

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore

Do You Want To express your thoughts

drop us a line and keep in touch