সান্টা ক্লজ, ক্রিসমাস ট্রি, গির্জার আলোকসজ্জা, কেকের রকমারি, উপহার দেওয়া নেওয়া। এমন ভাবেই 25 শে ডিসেম্বর দিনটিতে সাজতে দেখা যায় গোটা বিশ্বকে। বড়দিনের শীত-শীত আমেজে বাঙালি মানেই চিড়িয়াখানা, ময়দান বা শহরের বিভিন্ন বিখ্যাত পার্কে সপরিবারে চড়ুইভাতি। আবার রাতের আলোকিত পার্ক স্ট্রিটে বড়দিনের উৎসবে মেতে ওঠা। আর কেক না খেলে যেন এই দিনটা অসম্পূর্ণই থেকে যায়।
২৫শে ডিসেম্বর অর্থাৎ যিশুর জন্মদিন, খ্রিস্টান অখ্রিস্টান নির্বিশেষে সবার প্রিয় উৎসবের দিন। বড়দিন এখন ধর্মীয় উৎসবের থেকেও অনেক বেশি পরিমাণে হয়ে উঠেছে অসম্প্রদায়িক মিলন দিবস। ধর্মানুযায়ী মুসলমান ব্যাক্তি গোলাপ বিক্রি করছেন খ্রিস্টধর্মের গির্জার সামনে বসে, আবার সেই গোলাপ কিনছেন কোনো বাঙালি ব্যাক্তি। কলকাতার বুকে এমন ঘটনা চোখে পরে প্রায়শই। আর বড়দিনে পেট পুজোর কথা বললে, শীতের পিঠে পুলির সঙ্গে বাঙালির থালায় জায়গা করে নিয়েছে বড়দিনের কেক।
কলকাতাবাসীর বড়দিনে প্রিয় জায়গা পার্কস্ট্রিট। দুর্গাপুজোয় কলকাতায় যতটা ভিড় দেখা যায়, বড়দিনেও আলোকিত পার্ক স্ট্রিটে দেখা যায় সেই ভিড়। শোনা যায় সুপ্রিমকোর্টের চিফ জাস্টিস এলিজা ইম্পে বর্তমানের পার্ক স্ট্রিটে সেই সময়ে তৈরি করেছিলেন ‘ডিয়ার পার্ক’। যাতে বড়দিনে সান্টা ক্লজ তার বলগা হরিণ চালিত স্লেজ গাড়ি চড়ে সহজেই আসতে পারেন। যদিও এখন সেই পার্ক আর নেই।
এখনও ছোটো শিশুরা বিশ্বাস করে বড়দিনে সান্টা ক্লজ লুকিয়ে ঝুলিয়ে রাখা মোজায় তাদের প্রিয় উপহার রেখে যায়। যদিও এই সান্টা ক্লজের উপহার দেওয়া নিয়ে এক গল্প শোনা যায়। লোক মুখে শোনা যায়, চতুর্থ শতাব্দীতে এশিয়া মাইনরের মায়েরাতে (বর্তমানের তুর্কিস্তান) সেন্ট নিকোলাস নামে এক দয়ালু ব্যক্তি ছিলেন। তিনি অগাধ সম্পতির মালিক ছিলেন। তিনি মানুষের দুঃখ কষ্টে পাশে দাঁড়াতেন। একবার এক গরিব লোক তার তিন মেয়ের বিয়ে দিতে অক্ষম হওয়ায় নিকোলাস লুকিয়ে তার বাড়ির চিমনি দিয়ে সোনাদানা ফেলতে থাকেন। আবার আবার সেই লোকটি তার মোজা সেখানে শুকোতে দেওয়া সেই মোজা সোনাদানায় ভর্তি হয়ে যায়। এরপর সেই ব্যাক্তি এতো সোনাদানা দেখে সন্দেহ করায়, চিমনির পাশে থাকা নিকোলাসকে দেখে ফেলেন। দয়ালু নিকোলাস তার এই বীরত্বের ঘটনা লুকিয়ে রাখতে চাইলেও লোক মুখে এই ঘটনা ছড়িয়ে পরে। আবার বড়দিনে বিখ্যাত ক্রিসমাস ক্যারল পূর্বে পরিচিত ছিল বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক সংগীত হিসেবে। পরে সেই গানই বিভিন্ন গির্জায় গাওয়া হয়।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কাছে যীশু খ্রীষ্ট ছিলেন ‘মানবপুত্র’, ‘কল্যাণের দূত’। কবি যীশু খ্রীষ্ট সম্পর্কে লিখেছিলেন, ‘একদিন যারা মেরেছিল তারে গিয়ে, রাজার দোহাই দিয়ে’। যা ক্রিসমাস ক্যারল হিসাবে গাওয়া হয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ যিশুর জন্মউৎসব পালন হিসাবে শান্তিনিকেতনের পৌষ উৎসব অঙ্গীভূত করেন। শুধু কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নন স্বামী বিবেকানন্দ আমেরিকার এক বক্তৃতায় যীশু এবং কৃষ্ণের জীবনের সাদৃশ্যের কথা বলেন।
২৫ শে ডিসেম্বর এক উৎসবের দিন। সবার মিলনের দিন। খ্রিষ্টান অখ্রিষ্টান নির্বিশেষে আনন্দে মেতে ওঠার দিন। কেক, ক্রিসমাস ট্রি, আলোকিত গির্জা, ক্রিসমাস ক্যারল প্রভৃতি নিয়ে দিনটি সত্যিই বড়দিন।
শারায়া পাল
জন্ম ১৫ই ডিসেম্বর, ২০০১
পশ্চিমবঙ্গের, উত্তর ২৪ পরগনার অধিবাসী।
বর্তমানে বিদ্যাসাগর কলেজের
সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী।