বড়দিনে পার্কস্ট্রীট

Share This Post

বাতাসে কেকের গরম মশলার বা ধ্রুপদী পামিয়ের বিস্কুটের চিনির গুড়ো! গাইড, ডিনার জ্যাকেট, বো-টাইয়ের ঢল। ছবিটা এখনও চোখে ভাসে পারক-স্ট্রীট পাড়ার ত্রিকালদর্শী বৃদ্ধের।;  

এখন অবশ্য তার বদলে রয়েছে ঝলমলে আলো জলা শিং, খরগোশ চুলের ব্যান্ড আর রকমারি সস্তা টুপি, বয়স ভুলে হঠাৎ খিটখিটে গৃহকর্তারাও বড়দিনের সন্ধ্যায় মেতে উঠেছে। ততক্ষণে ভিড়ের চোটে পুলিশযান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে শহরের উৎসব তীর্থে। আমি অবশ্য কলকাতাই বড়দিন দেখেছি খুব বেশি দিন না। বড়দের মুখে শুনেছি পার্কস্ট্রীট, নিউ মার্কেট পাড়া পঞ্চাশের দশকে ছিল কলকাতার তাজমহল ! কিন্তু তখন দশ জনের ভিড় হলে এখন হাজার লোকের সমাবেশ ঘটে।  

বড়দের মুখে শুনেছি তখন কলকাতার বড়দিন বা বর্ষবরণে বাদামি সাহেবদের হাঁকডাকেই আটকে থাকত। তার বদলে এখন দুই ২৪ পরগণা, হাওড়া-হুগলি কিংবা আরও দূর মফস্‌সলও বছর শেষে পার্কস্ট্রীটে ঝাঁপিয়ে পরেন। আগেও নানা কিসিমের কাগজের রঙিন টুপি দেখা যেত পার্কস্ট্রিট পাড়ায়। এখন চিনা ক্রিসমাস ট্রি, “সান্তা ক্লসের স্লেজের হরিণের সিং কি এমন অদ্ভুত দেখতে হয়”- নিউ মার্কেটের শতাব্দী প্রাচীন উপহার-বিপনি ইয়াকুব মল্লিকে গজগজ করছিলেন জনৈক প্রৌঢ়া। 

ষাটের দশকের কলকাতা মানে সেরা সব কর্পোরেটের পীঠস্থান, দেশ-বিদেশের নামজাদাদের ভিড়। তখন সাধারণ মধ্যবিত্তকে কিন্তু পার্ক স্ট্রিটে তত দেখা যেত না। এ কলকাতায় হতদরিদ্র মাতালও বড়দিনে ভাতের বদলে কেকের টানে মরিয়া। তখন ছিল মেরেকেটে খান দশেক রেস্তরাঁ। আর এখন পার্ক স্ট্রিট ও লাগোয়া এলাকায় ৬০-৬৫টি ছোটবড় রেস্তরাঁ। তবে ক্রিসমাস লাঞ্চে একটা ভাল স্টেক বা রোস্ট খেতেই হবে, এমন চাহিদার লোক কম। তার বদলে কোথাও একটা হইহই করে বিরিয়ানি বা চাইনিজ় খেয়ে নিলেই হল। রাজ্য সরকারের অবসরপ্রাপ্ত আমলা, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী-সুকুমার রায়দের বাড়ির ছেলে প্রসাদরঞ্জন রায় আজকাল ‘ক্রিসমাস লাঞ্চ’ সারতে ক্যালকাটা ক্লাবটাবেই যান। ভিড় ঠেলে পার্ক স্ট্রিটে যেতে খুব একটা ইচ্ছে করে না তাঁর। তবে তাঁরও ছোটবেলা জড়িয়ে রয়েছে ট্রিঙ্কাজ়-কোয়ালিটির নানা সুখস্মৃতির সঙ্গে। 

পার্ক স্ট্রিটের সাবেক রেস্তরাঁ-কর্তাদের মতে, সরকারি উদ্যোগে গোটা রাজপথ আলোয় সাজানো বা অ্যালেন পার্কের অনুষ্ঠান— সবই খুব ভাল উদ্যোগ। কলকাতার বহুত্বকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা আজকের দিনে খুবই জরুরি। এ বিষয়ে একমত লা মার্টিনিয়র ও প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী, শিক্ষাবিদ দেবী করও। এখনও বেঙ্গল ক্লাব বা লোরেটো স্কুল-কলেজে যাতায়াতের সূত্রে পার্ক স্ট্রিট পাড়া দেখা হয় তাঁর। ‘‘এমনিতে ঠিকই আছে। তবে ইদানীং তেড়েফুঁড়ে উৎসব-উদ্‌যাপনের বিষয়টি তত ভাল লাগে না। এখন সব উৎসবই এক রকম লাগে। বড়দিনের পুরনো চরিত্রটা পাই না।’’— বলছেন তিনি।  

লেখক
সৌম্যদীপ বিশ্বাস

Share This Post

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore

Do You Want To express your thoughts

drop us a line and keep in touch