ফের প্রকৃতির টানে

Share This Post

তখন ভরা লক ডাঊন প্রায় ৬ মাস ঘর বন্ধি থাকার পর হঠাৎ শুনলাম, ধীরে ধীরে নাকি সব খুলতে শুরু করেছে। লকডাউনে হত, বেরাতে যাওয়া তো আগের জন্মের স্মৃতি! শুক্রবার কলেজের ক্লাসের শেষে টূক করে একবার ছাদে গিয়ে দেখলাম, বেশ একটা টেকনিকালার সানসেট হচ্ছে। কী রকম যেন মনকেমন করে উঠল। ঠিক করে ফেললাম, রাতেই দাদা আর আমি বেরিয়ে পড়ব কোথাও একটা, আর উইকেন্ডটা কাটিয়েই ফিরব।

সে রাতে ঘুম খুব একটা হল না। ভোর ৪ টেয় অ্যালার্ম বাজার আগেই ঘুম ভেঙ্গে গেল, অগত্যা রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। এয়ারপোর্ট, দক্ষিণেশ্বর, বালি ব্রিজ হয়ে ডানকুনি টোল গেট পেরতেই সব মন খারাপ আর দুশ্চিন্তা মাথা থেকে বেরিয়ে গেল। সেই চেনা রাস্তা, সেই চেনা হওয়ার শব্দ, চেনা সব গাড়ির পাশ কাটানোর অঙ্ক কষা আর নিজেকে হারিয়ে ফেলার সুযোগ।

কোলাঘাট পৌঁছলাম ঘণ্টাদেড়েকে।, নন্দকুমারের পরের রাস্তা এখন সারিয়ে চওড়া করা হয়েছে তাই আগের তুলনাই অনেক তারতারি পৌঁছে গেলাম মন্দারমনি। বহুদিন আগে একবার সমুদ্রে গিয়ে একবার বৃষ্টির মাঝে জলে নেমেছিলাম, চার পাশে কেউ নেই মনে হয়েছিল, বিশ্ব চরাচরে আমি একা। অনেক দিন পর আবার সেই একই রকম অনুভুতি । এক শনিবারের সকাল ৯ টায় মন্দারমণির ধু-ধু সমুদ্রে সৈকতে দারিয়ে যে সেই দেজাভু হবে, কে জানতো ! কয়েক জন মাছ ধরতে ব্যস্ত জেলে আর জনাতিনেক আমাদের মত বেড়ানো পাগল লোক ছাড়া গোঁটা সৈকত জন শূন্য। সমুদ্রের অবিরাম গর্জন, হাওয়া, আর পাখির ডাক ছাড়া আর কোনও শব্দ নেই। সমুদ্র সৈকত বহুবার এসেছি, ভবিষ্যতেও আসব। কিন্তু মন্দারমনির এই রুপ হয়তো আর কোনোদিনও দেখবো না । এবার মাথা গোঁজার জায়গা খোঁজার পালা। বেশির ভাগ রিসর্টই সেই সময়ে বন্ধ। হাতে গোনা কয়েকটা হোটেল টুরিস্টের আশায় দিন গুনছে।  তারই একটাই ঢুকে পড়লাম পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্যানিটাইজ করে।

 সমুদ্রের ঢেঊয়ের সাথে প্রিয় যুদ্ধটা সেরে নিয়ে স্নান-খাওয়া করে একটু বিশ্রামের পর বাইক নিয়ে বেরলাম মোহনার দিকে। পৌঁছে দেখি বালিতে কিছু লাল কাঁকড়া, দুটো কুকুর, কয়েকটা দাঁডকাক আর আমি ছাড়া কেউ নেই।

পর দিন ভোরে টুক টুক করে  হেটে গেলাম বিচ ধরে অনেকটা, আগের দিন দেখা জেলেদের সাথে আজ আলাপ হল। শুনলাম জালে মাছ ধরা পরার সংখ্যাটা বেড়েছে অনেকটাই পর্যটক কমে যাওয়ার কারনে জেলেরা প্রমান হিসাবে সাথে থাকা ঝুড়িগুলোকেই তুলে ধরলো। এই প্রথম পাফার ফিশ দেখলাম, যে প্রয়োজনে নিজের চেহারা ফুলিয়ে বেলুনের মত করতে পারে। অন্য ছোট মাছের সাথে ওঠা পাফার ফিশ গুলো জেলেরা বালিতেই ফেলে দিচ্ছিল, জেলে দের ভাষাই এই ব্যাঙ মাছকে খওয়া যায় না।  বালিতে ফেলে দেওয়ার পর মাছ গুলকে ধরে ধরে জলে ছেড়ে দিয়ে এলাম। তার পর নিজেকেও ছেড়ে দিলাম সমুদ্রে, আপাতত শেষ বারের মত। দীঘা-মন্দারমণি-তাজপুরের সৈকতে এখন ভিড় আগের মতোই, যদিও অনেক জলে নামছেন না অনেকেই , হোটেলের পুল গুলোও খালি রাখা হয়েছে। করোনার দৌলতে গোটা বছরটাই খরচের খাতাই, পাওনার খাতায় যা জমা করেছি তার মধ্যে এই জনশূন্য মন্দারমণি ভ্রমনের অভিজ্ঞতা উপরের দিকেই থাকবে। 

Share This Post

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore

Do You Want To express your thoughts

drop us a line and keep in touch