চিরবিদায় ফেলুদা

Share This Post

অভিনয় জগতে তাকে একাধিক বার বলতে শোনা গেছে, ‘আমি বেঁচে আছি বলে সিনেমাটা করছি না, সিনেমাটা করছি বলে বেঁচে আছি।‘ তার অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ বোধ হয় এই কথার মাধ্যমেই। বা তিনশোরও বেশি সিনেমা চলচ্চিত্র প্রেমীদের উপহার দেওয়ার মধ্য দিয়ে।

দীর্ঘ ৪০ দিন লড়াই করার পর জীবনযুদ্ধে হার মানতে হলো প্রিয় অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। একটা মীরাক্কেলের আশায় ছিলেন চলচ্চিত্র অনুগামীরা।৮৪ বছর বয়সী এই প্রবীণ অভিনেতার জীবনের পথচলা শেষ হলো, ১৫ই নভেম্বর ২০২০।

কৃষ্ণনগরের ছোট্ট পুলু ওরফে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের চলচ্চিত্র জীবনে পথচলা শুরু ১৯৫৯ সালের ‘অপুর সংসারে’র মধ্য দিয়ে। যদিও তাকে এর আগে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন নাট্যমঞ্চে। কখনও তাকে দেখা গেছে মৃণাল সেনের পরিচালনায় ‘আকাশ কুসুমে’, কখনও সত্যজিত রায়ের পরিচালনায় ‘ফেলুদা’তে, আবার কখনও লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘সাঁঝবিতি’তে। তবে তাকে শুধুমাত্র অভিনেতার গণ্ডিতে বেঁধে দিলে ভুল হবে। আবৃত্তি শিল্পী হিসাবেও তার নাম উচ্চারিত হয় সগৌরবে। আবার নিজেকে আত্মপ্রকাশ করার মাধ্যম হিসাবে কলেজজীবন থেকেই তার সঙ্গী হয়েছিল কবিতা লেখা। একবার লেখক জয় গোস্বামী তাকে অভিনয়ে নিজেকে আত্মপ্রকাশের পরেও কবিতা লেখার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অভিনয়ের সময় কি হয় জানো, আমি কোনো একটা চরিত্রের অন্তরালে আত্মগোপন করি। বলা যায়, চরিত্রটিকে সামনে রেখে তার পিছনে লুকিয়ে পড়ি। বা, উবু হয়ে বসে থাকি। চরিত্রটিই তখন আমার আড়াল। এই বার সেই চরিত্রের সত্ত্বার সঙ্গে নিজেকে অল্প করে মিশিয়ে চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তোলার কাজটা শুরু হয় আমার মধ্যে। কিন্তু কবিতা লেখার সময় আমাকে কোনো চরিত্রের মধ্যে ঢুকে কথা বলতে হচ্ছে না আর। এই আমি মানে আমার যা সারাংশ, তাকেই সরাসরি বলতে পারছি।’

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ই সেই অভিনেতা যার মাধ্যমে গোয়েন্দা চরিত্র ফেলুদা পরিচিতি পেয়েছে। ‘চারুলতা’, ‘অপুর সংসার’, ‘কোনি’, ‘মন্ত্রমুগ্ধ’, ‘বসন্ত বিলাপ’, ‘সাত পাকে বাঁধা’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘অশনি সংকেত’, ‘হিরক রাজার দেশে’ প্রমুখ ছায়া ছবি তার হাত ধরেই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তাই প্রিয় অভিনেতার বিদায়ের সংবাদে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তার সহকর্মীরা। তিনি শুধু নব্বই দশকের মাধবী মুখোপাধ্যায়, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, শর্মিলা ঠাকুর, রঞ্জিত মল্লিক, সাথেই নয়, বর্তমান যুগের পাওলি দাম, দেব অধিকারীর সাথেও স্ক্রিন শেয়ার করেছেন।

একজন বিখ্যাত নাট্যকার হিসাবেও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় দেশবাসীর মনে জায়গা করে নিয়েছেন। তার অভিনীত বিভিন্ন নাটকগুলি হলো ‘কিং লিয়ার’, ‘রাজকুমার’, ‘নীলকন্ঠ’, ‘আত্মকথা’, ‘হোমপাখী’ প্রমুখ। নাট্য ব্যাক্তিত্ব দেবশঙ্কর হালদার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যাযয়ের থিয়েটার সম্পর্কে ব্যাকুলতার পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, ‘সারা পৃথবী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে তাঁর সিনেমার জন্যই চেনে। কিন্তু থিয়েটারের জন্য আমি ওর যে আকুতি দেখেছি তা অভাবনীয়।’

ব্যাক্তিগত জীবনে তিনি কলকাতার সিটি কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন।  স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বিবাহ করেছিলেন দীপা চট্টোপাধ্যায়কে। তার একটি ছেলে ও একটি মেয়ের মধ্যে মেয়ে পৌলমী চট্টোপাধ্যায় (বসু) একজন নাট্যকর্মী।

সৌমিত্র চট্টপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর তাঁর প্রথম ছবি ‘অবলম্বন’ মুক্তি পেতে চলেছে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। যেখানে তাকে দেখা যাবে একজন লেখকের ভূমিকায়। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত তাঁর বায়োপিকের ডাবিংও সম্পূর্ণ করে গেছেন তিনি। যার নাম ‘অভিযান’। এখানেই পথচলা শেষ হলো কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। শেষ হলো বাংলা অভিনয় জগতের এক যুগের।

শারায়া পাল

জন্ম ১৫ই ডিসেম্বর,
২০০১ পশ্চিমবঙ্গের, উত্তর ২৪ পরগনার অধিবাসী।
বর্তমানে বিদ্যাসাগর কলেজের সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী।

Share This Post

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore

Do You Want To express your thoughts

drop us a line and keep in touch