৫ই ডিসেম্বর : বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস

Share This Post

ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী পৃথিবীর তিন ভাগ জল এক ভাগ স্থল। তাই স্বাভাবিক রূপে জলোচ্ছ্বাসের পরিমাণে স্থলভাগের সংখ্যা কম। তবে মাটি বা মৃত্তিকা থেকে তৈরি বিশ্ব ব্রহ্মান্ড। কারণ মৃত্তিকায় যদি না থাকে তবে হবে না কোন ফসল ।কিসের ওপর নির্মাণ হবে ঘরবাড়ি ,রাস্তা? তাই মাটি বা মৃত্তিকা কে সম্মান করা উচিত। উচিত মাটি সংরক্ষন করা এমনকি মাটির প্রতি সচেতন হওয়া।

২০০২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক ভাবে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পালন করে আসছে। পরবর্তীতে এর গুরুত্ত্ব অনুধাবন করে জাতিসংঘের সাধারন পরিষদ ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ৫ ডিসেম্বরকে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ২০১৪ সালের ৫ ডিসেম্বর প্রথমবারের মত জাতিসংঘের FAO এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সারা পৃথিবীব্যাপী ‘বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস’ পালিত হয়।

পৃথিবীর জীববৈচিত্রের মোট ২৫% এর সরাসরি আবাসস্থল হল মৃত্তিকা। মৃত্তিকার অনুজীব কর্মকান্ড মাটির গুনাগুন এবং কৃষি উতপাদনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। FAO এর মতে Soil microorganism মাত্র ১% সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন অর্থাৎ অধিকাংশই এখনো অজানা। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এই দিবসে খুব ধুমধাম করে পালিত হয়। তবে এইবার বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস এর প্রতিপাদ্য বিষয় হল ‘কিপ সয়েল অ্যালাইভ, প্রটেক্ট সয়েল বায়োডাইভারসিটি’ অর্থাৎ ‘মাটি বাঁচিয়ে রাখুন, মাটির জীববৈচিত্র্য রক্ষা করুন’।

প্রাকৃতিকভাবে ১ ইঞ্চি পরিমান মৃত্তিকা গঠিত হতে ৫০০-১০০০ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। তাই মাটি সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ কীটনাশকের ব্যবহার কিংবা মাটির অপব্যবহার এত মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে যে, মাটির স্বাভাবিক গঠন এর রূপ হারিয়ে ফেলছে।

আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩% করে বনভূমি বিনাশ হচ্ছে যা ব্যাপকভাবে ভূমি ক্ষয়ের কারণ এবং বাংলা পিডিয়ার তথ্য মতে এভাবে মৃত্তিকা ক্ষয়ের পরিমান বছরে ১০২ টন/হেক্টর। এছাড়াও বাদ যায়নি পাহাড়ি অঞ্চল, বিভিন্ন পর্যায়ের জুমচাষের মাধ্যমেও ঘটাচ্ছে মাটি ক্ষয়। বিভিন্ন বনাঞ্চল গলিকে ধ্বংস করে নির্মাণ হচ্ছে বড় বড় কলকারখানা, ইতিমধ্যে গণমাধ্যম এর মাধ্যমে জানা গেছে নির্মাণ হয়েছে বিপুল পরিমাণ ইটভাঁটা। যা মাটি ক্ষয়ের প্রধান কারণ।

আমাদের দেশে মৃত্তিকা বিজ্ঞান এবং পরিবেশ বিজ্ঞান স্কুল কলেজ পর্যায়ে এখনো সেভাবে পাঠ্য নয়। কাজেই বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে এর প্রচার করা অতি -আবশ্যক। অন্য দিকে বিচার বিবেচনা করলে দেখা যায়, আগত প্রজন্ম মাটির অবদান সম্পর্কে জ্ঞানবদ্ধ নয়। তারা বাহ্যিকভাবে মাটির গুরুত্ব জানলেও তার ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন নয়। তাই পাঠ্যবিষয়ে মৃত্তিকার গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা থাকলে হয়তো আগামী প্রজন্ম মাটি ক্ষয়ের মতো ভুল সিদ্ধান্ত নেবে না। পাঠক্রমের মধ্যে তার অবদান সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা রাখা জরুরি।

বিগত কয়েক বছরের ঝড়- ঝাপটা, জলোচ্ছ্বাসের কারণে মাটি সংরক্ষণ ও ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। কমেছে মাটির গুণগত মান।সরকারি অনুমোদন এর সাথে জোর কদমে লাগা উচিত মাটি সংরক্ষণের কাজে। কারণ মাটি সংরক্ষণ না হলে ভেঙে যেতে পারে খাদ্য শৃঙ্খল হারিয়ে যেতে পারে জীব শৃঙ্খলের সামঞ্জস্যতা।

লেখক : রাখী সাঁফুই(নিউ আলিপুর কলেজে জার্নালিসম্ ; মাস কমিউনিকেশনের ছাত্রী ও রিসাইটাল স্ফেরিকালে ইন্টার্ন)(২০২১ ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম)

Share This Post

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore

Do You Want To express your thoughts

drop us a line and keep in touch