ব্লুজ ঐতিহাসিকভাবে একটি আফ্রিকান-আমেরিকান গানের ফর্ম। ব্লুজ এর উৎপত্তি নিয়ে খুব একটা ভালো ভাবে ব্যাখ্যা করা না থাকলেও বিশ্বাস করা হয় যে, পূর্বে দাসত্ব করা আফ্রিকান- আমেরিকান এবং তাদের বংশধররা এই ধারাটি তৈরি করেছিল ।
ব্লুজের সহজ কিন্তু অভিব্যক্তিপূর্ণ ফর্মগুলি ১৯৬০ এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে জনপ্রিয় সংগীতের বিকাশের উপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবগুলির মধ্যে একটি হয়ে ওঠে।আফ্রিকান বাদ্যযন্ত্রের ঐতিহ্য, আফ্রিকান-আমেরিকার কাজের গান, আধ্যাত্মিকতা, এবং হোয়াইট আমেরিকানদের ইউরোপীয় ঐতিহ্যের লোকসংগীতের শিকড় থেকে এই ধারাটি আরও উন্নত হয়েছে।
ব্লুজের যাত্রা শুরু হয়েছিলো সম্ভবতঃ পশ্চিম আফ্রিকা থেকে গভীর দক্ষিণে, আর উত্তর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শহুরে কেন্দ্রগুলিতে। ব্লুজ মূলত একটি ভোকাল ফর্ম।
ব্লুজ গানগুলি বর্ণনামূলক হওয়ার পরিবর্তে অনেক বেশি লিরিক্যাল; ব্লুজ গায়করা গল্প বলার চেয়ে অনুভূতি প্রকাশ করেন বেশি। প্রথম ব্লুজের রেকর্ডিং তৈরি হয়েছিল,১৯২০ এর দশকে কৃষ্ণাঙ্গ মহিলাদের দ্বারা যেমন মামি স্মিথ, মা রেইনি, ইডা কক্স, এবং বেসি স্মিথ। এই পারফর্মাররা মূলত জ্যাজ ব্যান্ড দ্বারা সমর্থিত স্টেজ পারফর্মার ছিল;তাদের স্টাইল ক্লাসিক ব্লুজ নামেই পরিচিত।
ব্লুজ এর সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল মূলত আফ্রিকান-আমেরিকান অভিজ্ঞতা কে ঘিরে এবং অবশ্যই সুখ-দুঃখের সার্বজনীন মানবিক অভিজ্ঞতা কে নিয়ে। ব্লুজ এর গানগুলি প্রথম দিকে মানুষের ব্যথা ও অবিচার কেন্দ্রিক ছিল কিন্তু সেটাই আবার এই বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতাকে ছাড়িয়ে যায়। ধীর গতির সাথে উদ্ভূত হলেও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সাথে সাথে আগের থেকে অনেক দ্রুততর হয়ে ওঠে ব্লুজ। ব্লুজ এর কিছু বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন রবার্ট জনসন, লুইস জর্ডান, জন হ্যামন্ড, জন লি হুকার,সিসিক স্টিভ।ব্লুজ এর কিছু বিখ্যাত গানের মধ্যে এগুলি অন্যতম – “I Cant Quit You Baby”,
“I’d Rather Go Blind ,“Crossroad Blues “.
ব্লুজ এর কিছু বিখ্যাত গিটারিস্টএর মধ্যে টি-বন ওয়াকার, মাডি ওয়াটারস,আলবার্ট কিং অন্যতম ছিলেন।
এছাড়াও ব্লুজ অন্যান্য অনেক মিউজিক স্টাইল কে প্রভাবিত করেছে। ব্লুজ রক মিউজিকে তাদের সর্বাধিক প্রভাব ফেলেছে।১৯৬০ এর দশকে ব্রিটিশ রক মিউজিশিয়ানরা , বিশেষ করে রোলিং স্টোনস, এরিক ক্ল্যাপটন এবং জন মায়াল, ব্লুজ দ্বারা দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন, যেমন মাইক ব্লুমফিল্ড, পল বাটারফিল্ড এবং অলম্যান ব্রাদার্স ব্যান্ডের মতো আমেরিকান রক মিউজিশিয়ানরাও ছিলেন।
ব্লুজ কখনোই হারিয়ে যায়নি বা অস্পষ্টতায় ডুবে যায়নি। নতুন যন্ত্র, কাঠামো এবং নতুন লিরিক্যাল থিমের মাধ্যমে এটি অসংখ্যবার নতুন জীবন সঞ্চার করেছে। গভীর আন্তেবেলাম দক্ষিণে এর শুরু থেকে উত্তর দিকে তার অবিচলিত যাত্রা, ব্লুজ ইতিহাসের সাথে এতটাই ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত এবং আমেরিকানদের দ্বারা এতটাই শ্রদ্ধেয় যে এটি কখনই বিনষ্ট হবে না।
লেখক পরিচিতি : দিশা সাহা
বিদ্যাসাগর কলেজের জার্নালিসম ও মাস কম -র দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্রী