তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন ‘তেজাব’ সিনেমার ‘এক দো তিন’ গানের কোরিওগ্রাফির জন্য। আবার শ্রীদেবীর ‘হওয়াই হওয়াই’ গানের কোরিওগ্রাফির জন্য খ্যাতি অর্জন করেছেন।
তিনি বলিউডের ‘মাস্টারজি’, বিখ্যাত কোরিওগ্রাফার সরোজ খান। যার আসল নাম ছিল নির্মলা নাগপালা। ৭১ বছর বয়সী এই প্রবীণ কোরিওগ্রাফার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৩রা জুলাই ২০২০ তে মারা যান। ১৯৪৮ সালে জন্ম নেন সরোজ খান। বয়স যখন মাত্র তিন তখন থেকেই মন প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছিলেন নাচকে। পঞ্চাশের দশক থেকে তিনি ব্যাক আপ নৃত্যশিল্পী হিসাবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তারপর বিভিন্ন চড়াই উতরাই এর মধ্যে দিয়েই ১৯৭৮ সালে ‘গীতা মেরা সীতা’ ছবিতে একক নৃত্য পরিচলনা করলে, তার সামনে খুলে যায় নিজের নাচ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা। এরপর তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
‘জব উই মেট’, ‘দেবদাস’ ও তামিল ছবি ‘শৃঙ্গার’ এই তিনটি ছবি সরোজ খানকে তিনবার জাতীয় পুরস্কারে সন্মানিত করেছে। তার প্রাপ্তির ঝুলিতে এছাড়াও রয়েছে আটটি সেরা কোরিওগ্রাফারের পুরষ্কার, আমেরিকান কোরিওগ্রাফার পুরষ্কার ও নন্দী পুরষ্কার।
জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত এই বিখ্যাত কোরিওগ্রাফারের বলিউডে যাত্রা শুরু হয় ‘নজরানা’ চলচ্চিত্রে শিশু শিল্পী শ্যামা হিসাবে। নৃত্য পরিচালক বি সোনলালের তত্ত্বাবধানে তিনি কোরিওগ্রাফির কাজ শুরু করেন। তাঁর কোরিওগ্রাফির জীবনে তিনি ২০০০ এর বেশী গানের কোরিওগ্রাফি করেছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কোরিওগ্রাফি হল ‘থানেদের’ ছবির ‘তাম্মা তাম্মা লোগে’, ‘বেটা’র ‘ধক ধক করনে লাগা’ প্রমুখ। ‘চাঁদনী’, ‘নাগিনা’ ছবির নৃত্য পরিচালনা তাকে পরিচিতি এনে দিয়েছে।
তার প্রিয় দুই অভিনেত্রী ছিলেন মাধুরী দিক্ষীত ও শ্রীদেবী কপুর। কখনও ‘হাওয়াই হাওয়াই’ গানের কোরিওগ্রাফিতে শ্রীদেবীর নাচে মানুষ তাকে চিনতে শুরু করেছিল। আবার কখনো ‘দেবদাস’ ছবির ‘দোলা রে দোলা’ গানে তার কোরিওগ্রাফিতে মাধুরী ও ঐশ্বর্যর নাচ তাকে জাতীয় পুরস্কারে সন্মানিত করেছে।
ব্যাক্তিগত জীবনে সরোজ খান মাত্র ১৩ বছর বয়সে তার ৪১ বছর বয়সি মাস্টারজি বি সোহেনলালকে বিবাহ করেন। যদিও তখন তিনি জানতেন না তার মাস্টারজি বিবাহিত এবং চার সন্তানের পিতা। ফলে বিবাহ জনিত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিলে সরোজ খানের তার মাস্টারজি বা স্বামীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় যায়। পরে অবশ্য তিনি ব্যাবসায়ী রোশান খানকে বিবাহ করেন।
সরোজ খান কোরিওগ্রাফির জগতে তার বিভিন্ন নতুন ড্যান্স মুভমেন্ট উপহার দিয়ে গেছেন। তিনি বহু নৃত্য অনুগামীদের অনুপ্রেরণা ছিলেন। মাধুরী দীক্ষিত যার বলিউডে জনপ্রিয়তা শুধুমাত্র অভিনয়ের জন্যই নয়, যিনি পরিচিত হয়ে আছেন একজন বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী হিসাবেও। তিনিও বহুবার বলেছেন, ‘আমি মাস্টারিজির থেকে শুধু নাচ নয়, নাচের সময় বিভিন্ন মুখভঙ্গিমাও শিখেছি।’ শুধু মাধুরী দীক্ষিত, শ্রীদেবী নয় তিনি আলিয়া ভট্ট, কঙ্গনা রানাউত, শিল্পা শেঠি কুন্দ্রা, কারিনা কাপুর খান, ঐশ্বর্য রায় বচ্চন প্রমুখ বলিউড অভিনেত্রীদের সরোজ খান নাচের জগতে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। তিনি কোরিওগ্রাফার হিসাবে বলিউডে শেষ কাজ কলঙ্ক চলচ্চিত্রে করে গেছেন। এখানেই তার জীবন যাত্রা শেষ হলে। তিনি দেশবাসীর মনে সর্বদা বলিউড বিখ্যাত মাস্টারজি হয়ে বেচেঁ থাকবেন।
শারায়া পাল
জন্ম ১৫ই ডিসেম্বর, ২০০১
পশ্চিমবঙ্গের, উত্তর ২৪ পরগনার অধিবাসী।
বর্তমানে বিদ্যাসাগর কলেজের সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী।