প্রায় গোটা একটা বছর। একটা দমবন্ধকর পরিস্থিতি। ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়েই ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে সমস্ত বিশ্ববাসী। এ যেন ছিল কল্পনাতেও অবশ্যম্ভাবী। ২০১৯ সালের শেষে অর্থাৎ ডিসেম্বর মাস থেকে এই ভয়ানক ভাইরাস করোনা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। একটা শিহরণ জাগানো পরিস্থিতি। আর সেখান থেকে বাঁচতেই অনেকের বন্ধু হয়ে ওঠে ছেলেবেলার রং পেন্সিল বা ছেলেবেলার বিভিন্ন ভালোলাগা।
বয়স যখন চার পাঁচ ছোট্ট সেই হাতটা ধরে বাবা মায়েরা হয়তো জোর করেই বসিয়ে দিয়ে যান গান, নাচ, আবৃত্তি, আঁকার স্কুলে। ওই অবাক চোখগুলো চেয়ে থাকে তাদের নতুন সঙ্গী গুলোর দিকে। তারপর সেই অনিচ্ছাকৃত নাচ, গান, আঁকার খাতাগুলোই ভালোলাগার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর সেই সময়তেই যখন বয়সটা চার-পাঁচ থেকে অনেকটা বেড়ে যায়, পড়াশোনার চাপ আবার বড়ো হওয়ার সাথে সাথে বিভিন্ন দায়িত্বের চাপ গুলো বাড়তে থাকে, হঠাৎই রং পেন্সিল গুলো পড়ে থাকে ঘরের এক কোণে। গান, নাচ, আবৃতিগুলো যেনো স্মৃতি হয়ে দাঁড়ায়। অবশ্য অনেকেই আবার ছোটোবেলার এই বন্ধুগুলোকেই জীবনে পথচলার সঙ্গী করে তোলে।
করোনাকালে বিশ্ববাসী যখন ঘরবন্দী, যখন আঁকড়ে ধরেছে বিভিন্ন মনখারাপ, মানসিক অবসাদে ভুগছেন অনেকেই। তখনই যেন বন্ধু হয়ে পাশে থেকেছে ছোটবেলার সেই সমস্ত সঙ্গী গুলো। কেউ হয়তো রং তুলিকে বন্ধু করেছে, কেউ তাদের প্রিয় গান বা নাচ কেউ আবার আবৃত্তিকে। অনেক মনোবিদেরা মানসিক অবসাদ থেকে বেরিয়ে আসার উপায় হিসেবে বলে থাকেন ছোটবেলার সেই সমস্ত ভালোলাগাগুলোকে আঁকড়ে ধরতে।
শুধু নাচ গান আবৃত্তি নয় কখনও ভালোথাকার সঙ্গী হয়ে উঠেছে রান্নাঘরের নতুন নতুন খাবারের পদ, ঘরের বিভিন্ন কোণ নতুন রূপে সাজিয়ে তোলা আবার বারান্দা গাছপালায় ভরিয়ে তোলা।
অনেকেই করোনাকালে তাঁদের সেই সমস্ত আঁকা, নাচ, গান তুলে ধরেছে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে। আবার অনেকের প্রতিভাই জায়গা করে নিয়েছে খবরের কাগজে আবার কখনো টেলিভিশনের পর্দায়। কিছুটা পরিচিতি এনে দিয়েছে তাদের।
হয়তো দরকার ছিল এমন কিছু সময়ের। যেখানে খুঁজে পাওয়া যায় নিজেকে। আবার নতুন করে ফুটিয়ে তোলা যায় নিজের ভালোলাগাগুলোকে। মেতে ওঠা যায় পুরনো বন্ধু গুলোর সাথে। সময় দেওয়া যায় অতীতের ভাবনাচিন্তা গুলোকে। এ যেনো করোনা পরিস্থিতির এক নতুন পাওয়া। করোনার সমস্ত খারাপ দিকগুলোর মধ্যে এক ভালোলাগার দিক।
শারায়া পাল
জন্ম ১৫ই ডিসেম্বর, ২০০১
পশ্চিমবঙ্গের, উত্তর ২৪ পরগনার অধিবাসী।
বর্তমানে বিদ্যাসাগর কলেজের সাংবাদিকতা
বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী।