We wish you a merry Christmas
We wish you a merry Christmas
We wish you a merry Christmas
And a Happy New year
ডিসেম্বর মাসের কথা শুনলেই মাথায় আসে পিকনিক,বড়দিন, সান্তা ক্লস এর টুপি, আর আরো একটা বছর কে পিছিয়ে রেখে আরো একধাপ সামনে এগিয়ে যাওয়া। বলা হয় যে যেসব উৎসব পৃথিবীব্যাপী পালন করা হয়, তাদের মধ্যে সবচেয়ে পুরনো হলো এই বর্ষবরণ উৎসব । ইংরেজিতে যাকে আমরা বলি নিউ ইয়ার। স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে যে ঠিক কবে থেকে এই নিউ ইয়ার বা বর্ষবরণ উৎসব শুরু হয়? তাহলে আসুন একটু ঘাঁটাঘাঁটি করা যাক নিউ ইয়ার এর খুঁটিনাটি নিয়ে।
শোনা যায় প্রায় চার হাজার বছর আগে অর্থাৎ উনিশ শতকে মেসোপটেমীয় সভ্যতার প্রথম নিউ ইয়ার পালন শুরু হয়। সে সময়ে বেশ জাঁকজমকের সঙ্গেই স্বাগত জানানো হতো নতুন বছরকে। তবে সেটা এখনকার মতো জানুয়ারির ১ তারিখে পালন করা হতো না, তখন নিউ ইয়ার পালন করা হতো বসন্তের প্রথম দিনে। বসন্তকালে এলে শীতকালের রুক্ষতা ঝেড়ে প্রকৃতি আবার নতুন করে সাজগোজ করতে শুরু করে। আর প্রকৃতির এই নতুন করে জেগে ওঠা কেই তারা নতুন বছর বলে চিহ্নিত করতো। অবশ্য তারা তখন চাঁদ দেখে বছর গণনা করতো তাই উৎসব শুরু হতো চাঁদ দেখে। তারপর যেদিন বসন্তের প্রথম চাঁদ উঠতো, শুরু হতো বর্ষবরণ উৎসব। চলত টানা ১১ দিন। এই ১১ দিনের অবশ্য আলাদা আলাদা তাৎপর্যও ছিল।
রোমানরা ছিল আবার এক কাঠি উপরে। চাঁদ দেখে তৈরি করে ফেলেছিল ক্যালেন্ডার । আর সেই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ ছিল ১লা মার্চ। প্রথমদিকে ওদের ক্যালেন্ডারে মাস ছিল মাত্র ১০ টা। ছিলো না জানুয়ারি আর ফেব্রুয়ারী, ছিল না কোন তারিখ ও। পড়ে সম্রাট জুলিয়াস সিজার এই ক্যালেন্ডারকে উন্নয়ন করে বসিয়ে দেন তারিখ। বছর হয় ৩৫৫ দিনের। তাহলে ভাবছো বাকি দশটা দিন গেল কোথায় ! আসলে চাঁদ দেখে হিসাব কড়ায় বছরে ১০টা দিন কমে গিয়েছিল। আর এখন আমরা বছরের যে হিসেব করি, তা হল সূর্য দেখে। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে রোমান সাম্রাজ্যে এই ক্যালেন্ডার নিয়ে কত ঝামেলাই না হয়েছিল। তাই সে সময় কোন দিনটা যে নতুন বছর হিসেবে শুরু হবে তা ঠিকই করা যাচ্ছিল না। একেক সময় একেক জায়গায় একেক দিন নতুন বছর হিসেবে পালন করা হতো। পরবর্তীকালে সম্রাট নুমা পন্টিলাস যখন জানুয়ারি আর ফেব্রুয়ারী কে ক্যালেন্ডারে ঢোকান, তখন তিনি ঠিক করে দেন বছরের প্রথম দিন হবে ১লা জানুয়ারি এবং বর্ষবরণও হবে সেই দিনই। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়লেও ১লা জানুয়ারির বর্ষবরণ উৎসব অর্থাৎ ইংরেজি নববর্ষ ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’।
বিভিন্ন দেশে নতুন বছরের প্রথম দিনটি পাবলিক হলিডে। নিউ ইয়ার এর আগের রাত হল নিউ ইয়ার ইভ।বর্তমানে যা থার্টি ফার্স্ট নাইট হিসাবে পরিচিত। প্রতিবছর ৩১শে ডিসেম্বর রাত ১২টা ১মিনিট থেকেই শুরু হয় নতুন বছর উদযাপনের উন্মাদনা। খ্রিস্টের জন্মের পর ক্যাথলিক খ্রিস্টানরা ক্রিস্টমাস ডে থেকে শুরু করে বছরের শেষ দিন মধ্যরাত অবধি বিভিন্নভাবে তাদের দেবতাদের পুজো করতো এবং সাথে থাকতো ভোগ-বিলাসের নানা আয়োজন।
এ তো গেল উনিশ শতকের কথা এবার আসা যাক বিশ শতকে। নিউ ইয়ার পালনের হিড়িক বা প্রবণতা মূলত তারুণ্য-নির্ভর। নতুন বছরে নিয়ম করে বাইরে খাওয়া, মেসেজিং, উপহার দেওয়া এরকম যাবতীয় ইভেন্টে তরুণদেরই দেখা যায় সামনের সারিতে। আলো ঝলমলে সুসজ্জিত শহরে মধ্যরাতে বন্ধুদের সাথে খোলা জিপে কিংবা জ্যাকেট গায়ে বাইকে চড়ে শহরময় ঘুরে বেড়ানোর যে স্বাধীনতা, যে আনন্দ তা শুধু তরুণরাই বোঝে। বয়স্করা যেহেতু সাবধানী, তাই তাদের দৌড় খুব বেশি হলে পরিবার বা বন্ধুবান্ধবের সাথে রুফটপ রেস্টুরেন্ট এর খোলা আকাশ এবং সুস্বাদু খাদ্য-পানীয়।
আমাদের ছোটবেলাতেও নতুন বছর আসা মানেই অবশ্য কর্তব্য ছিল হ্যাপি নিউ ইয়ার লেখা গ্রিটিংস কার্ড দোকান থেকে কিনে কিংবা নিজে হাতে বানিয়ে বন্ধুদের দেওয়া। শুধু দেওয়াই নয় একই ভাবে তাদের কাছে থেকেও কার্ড পাওয়ার প্রত্যাশা রাখা। কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে অভিনবত্বের তারণায় সে সব এখন অতীত। হাতে লেখা কার্ড এর দিন শেষ, এখন আর পাড়ার মোড়ের সেই দোকানের কার্ড কেনার লম্বা লাইনও দেখা যায় না। কার কটা কার্ড হলো, কে কার গোপন বন্ধু, কে কার প্রিয় বন্ধু সেসব মজাও সোশ্যাল দুনিয়ার ঠেলাঠেলিতে কেমন যেন উড়ে গেছে। সবাই এখন নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানায় ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ট্যুইটার কিংবা হোয়াটস্অ্যাপে। তার মধ্যে থাকেনা আন্তরিকতার ছোঁয়া। যেটুকু থাকে তা হলো কপি-পেস্ট।
দীপ্তরুপা সাঁতরা
জন্ম ২৬শে ডিসেম্বর, ২০০০
পশ্চিমবঙ্গের, উত্তর ২৪ পরগনার অধিবাসী।
বর্তমানে বিদ্যাসাগর কলেজের
সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী।