নবপত্রিকা বা কলাবৌ কিন্তু মোটেও গণেশের স্ত্রী নন। অনেকে ভ্রান্ত ধারনায় একে গণেশের স্ত্রী বলে। ইনি আসলে গণেশের মা। কারণ নবপত্রিকার ৯ টি গাছে মা দুর্গা ৯ রূপে অবস্থান করেন । কলা গাছে থাকেন দেবী ব্রাহ্মণী । ডালিম গাছে থাকেন দেবী রক্তদন্তিকা । ধান গাছে থাকেন দেবী লক্ষ্মী। হলুদ গাছে থাকেন মা দুর্গা । মান গাছে থাকেন দেবী চামুণ্ডা । কচু গাছে থাকেন দেবী কালিকা । বেল গাছে থাকেন দেবী শিবা। অশোক গাছে থাকেন দেবী শোকরহিতা। জয়ন্তী গাছে থাকেন দেবী কার্ত্তিকী ।
নবপত্রিকা হল বাংলার দুর্গাপুজোর একটি অঙ্গ। নবপত্রিকা শব্দটির আক্ষরিক অর্থ নয়টি গাছের পাতা। যদিও বাস্তবে এটি নয়টি পাতা নয়, নয়টি উদ্ভিদ। সেই নয়টি উদ্ভিদ হল: কদলী বা রম্ভা (কলা), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব (ডালিম), অশোক, মান ও ধান।
একটি কলাগাছের সঙ্গে অপর আটটি সমূল উদ্ভিদ একত্রে জড়িয়ে বেল, শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর আকার দেওয়া হয়; তারপর তাতে সিঁদুর দিয়ে সপরিবার দেবীপ্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পুজো করা হয়। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নাম কলাবউ। দুর্গার ডানদিকে তথা গণেশের পাশে রাখা হয় নবপত্রিকাকে। যারজন্য কলাবউকে অনেকে গণেশ ঠাকুরের বউ মনে করলেও সেটা একেবারেই ভুল।
এই নবপত্রিকার নয়টি উদ্ভিদ হল আসলে দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের প্রতীকরূপে কল্পিত হয়। দেখে নেওয়া যায় কোন উদ্ভিদ কার প্রতীক।
কদলি গাছ এর অধিষ্টাত্রী দেবী ব্রহ্মাণী
কচু গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী কালিকা
হরিদ্রা গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী উমা
জয়ন্তী গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী কার্তিকী
বিল্ব গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী শিবা
দাড়িম্ব গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী রক্তদন্তিকা
অশোক গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী শোকরহিতা
মান গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী চামুণ্ডা
ধান গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী লক্ষ্মী।
প্রচলিত প্রথা অনুসারে মহাসপ্তমীর দিন সকালে নিকটস্থ নদী বা কোনও জলাশয়ে (নদী বা জলাশয়ে না থাকলে কোনো মন্দিরে) নিয়ে যাওয়া হয়। পুরোহিত নিজেই কাঁধে করে নবপত্রিকা নিয়ে যান। তাঁর পিছন পিছন ঢাকীরা ঢাক বাজাতে বাজাতে এবং মহিলারা শঙ্খ ও উলুধ্বনি করতে করতে যান। শাস্ত্রবিধি অনুযায়ী স্নান করানোর পর নবপত্রিকাকে নতুন শাড়ি পরানো হয়। তারপর পুজোমণ্ডপে নিয়ে এসে নবপত্রিকাকে দেবীর ডান দিকে একটি কাষ্ঠসিংহাসনে স্থাপন করা হয়। পুজোমণ্ডপে নবপত্রিকা প্রবেশের মাধ্যমে দুর্গাপুজোর মূল অনুষ্ঠানটির প্রথাগত সূচনা হয়। নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। এরপর বাকি দিনগুলিতে নবপত্রিকা অন্যান্য দেবদেবীদের সঙ্গেই পূজিত হতে থাকে।বিশেষভাবে লক্ষণীয় হল, নবপত্রিকা প্রবেশের পূর্বে পত্রিকার সম্মুখে দেবী চামুণ্ডার আবাহন ও পুজো করা হয়। পত্রিকাস্থ অপর কোনো দেবীকে পৃথকভাবে পুজো করা হয় না।
লেখক পরিচিতি : শুভদীপ চ্যাটার্জি (অধ্যান্ত)
(স্টাফ রাইটার, রিসাইটাল স্ফেরিকাল)
তথ্য : পুরাণ সংক্রান্ত গ্রন্থ, ইন্টারনেট।