গোলন্দাজ

Share This Post

গোলন্দাজ

সিনেমা রিভিউ

কথায় আছে দীর্ঘ অন্ধকার কেটে যে আলোর সূচনা হয়, সেই আলো নাকি চোখ ধাঁধিয়ে দেয় , ঠিক এমনটাই ঘটলো বর্তমানে টলিউড ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে। সুদীর্ঘ অতিমারিতে আটকে থাকা বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ কে নতুন করে আবারও প্রানবন্ত হতে দেখা গেলো পূজোয় প্রকাশিত ‘ গোলন্দাজ ‘ ছবির মধ্যে দিয়ে। বাংলার হারিয়ে যাওয়া গৌরবময় ইতিহাস, ভাষা, সংস্কৃতি, স্বদেশ আন্দোলনের অধ্যায়টি আবার নতুন করে তুলে ধরা হয়েছে এই ছবির মাধ্যমে।

১০ই অক্টোবর সিনেমা হলে মুক্তি পায় এই ছবি। গল্পের সময়কাল পরাধীন ভারতবর্ষ, ও স্বৈরাচারী ব্রিটিশ শাসন। যার প্রধান চরিত্র অর্থাৎ ‘ নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারি ‘ -র ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে বাংলা চলচ্চিত্র জগতের খ্যাতনামা সুপারস্টার দেব কে। এর আগেও বিভিন্ন আলাদা চরিত্রে অভিনয়ের জন্যে নিজেকে যথার্থ ভাবে প্রস্তুত করে সফলতা আনতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এইবারও ঠিক এমনটাই হলো। নৌকাডুবি টলিপাড়ায় যেনো একবার নতুন করে হাল ধরে দিল ‘ গোলন্দাজ ‘ ছবি। নিজেকে একেবারে ভেঙে আবার যে নতুন করে গড়ে তোলা যায়, তা প্রমাণ করেছেন অভিনেতা ‘ দেব ‘ এই ছবির মধ্যে দিয়ে।

গল্পসার : ছবির প্রেক্ষাপট ও সময়কালে মিশে থাকা ভারতীয় বাঙালিরদের আবেগ ও দেশপ্রেম এক প্রবল শিহরণ জাগিয়ে তুলেছে সমগ্র ছবিটির প্লে জুড়ে। কাহিনিনুসারে নগেন্দ্রর (দেব) ছেলে বেলা থেকেই ধ্যানজ্ঞান ছিল ফুটবল খেলার প্রতি। ভারতীয় হিসেবে প্রথম তিনিই ফুটবলে পা দেন। নিজ প্রচেষ্টায় প্রায় ১০ এরও বেশি ফুটবল সংগঠন তৈরি করেছিলেন তিনি। প্রথম ভারতীয় হিসেবে তিনিই প্রথম ফুটবল ক্লাব গঠন করেন। নাম দেন ওয়েলিংটন। যদিও ব্রিটিশদের এই খেলায় জায়গা করা স্থানীয় ভারতীয়দের কাছে সহজ ছিল না। যেই ইউরোপীয় সংস্কৃতি নিয়ে ব্রিটিশের গর্ব ছিল আকাশছোঁয়া, সেই স্থানেই তাদের সমান মর্যাদার দাবি করেন নগেন্দ্র ও তার ক্লাবের সদস্যরা। ‘ফ্রেন্ডস’, ‘বয়েজ’, ‘প্রেসিডেন্সি’ ক্লাবের সহায়তায় নগেন্দ্র ‘ওয়েলিংটন’ ক্লাব শুরু করলেও একসময় নানা কারনে ভেঙে যায়। ডুরান্ড কাপে খেলা হয় না তাদের। যেখানে সমাজের প্রভাবশালী কুমর্মী দের ভূমিকা ছিল। ছবিতে অনির্বাণের চরিত্রের আগমনের অপেক্ষায় ছিল অনেকেই। হতে গোনা কয়েকটা সিনে জায়গা হলেও নিঃসন্দেহে বলা যায় ‘ ভার্গব ‘ -এর মত এক অসামান্য চরিত্রে তার অভিনয় ও চলার পথে নগেন্দ্রের পথ প্রদর্শক রূপে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন দর্শকদের মনে। এসবের পাশাপাশি নাড়ুর চরিত্রে ‘ মির্চি অগ্নি ‘ বেশ আনন্দ দিয়েছেন দর্শকদের।

গোলন্দাজ ছবির পোস্টার

এসবেরই মাঝে নগেন্দ্রের জীবনে জুড়ে যায়
‘কমলিনী’ (ইশা সাহা)। খুব সুন্দর মানিয়েছে (দেব-ইশা) জুটিকে। রাসের গানে তাঁদের মাধুর্য চোখে পড়ার মতো। কেবল মুকাবয়াব দ্বারাই প্রেম, খুশি, দুঃখ সমস্ত ভাব তুলে ধরেছেন সারা ছবি জুড়ে।পরবর্তীকালে রাজা আনন্দকৃষ্ণ দেব (পদ্মনাভ দাশগুপ্ত) অর্থাৎ নগেন্দ্রর শশুরমশাই ও অন‌্য ক্ষমতাবানদের সঙ্গে মিলিতভাবে নগেন্দ্র ‘শোভাবাজার ক্লাব’ তৈরি করেন। এইবার এক নতুন স্বপ্নের আনাগোনা শুরু হয় নগেন্দ্রর চোখে, ‘ট্রেডস কাপ‘। এবং ট্রেডস কাপ ফাইনলে প্রবেশ করা মাত্রই তার প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায় মেজর জ্যাকসনের টিম। এই শোভাবাজার ফুটবল টিম সংগঠনে নগেন্দ্রর এক নতুন নেতৃত্ব প্রদানকারী রূপ সামনে আসে। যার কথা অনুযায়ী ফুটবল টিম গেম, এখানে জাত, ধর্ম, বর্ন কিছুই গুরুত্ব রাখে না। কারণ একার লড়াইয়ে জয় আসে না কোনোদিন। তিনি আরও বলেন ‘ খেলার মাঠ মানুষকে ভাঙ্গে না, বরং গড়ে। ধর্ম-বর্ণ বৈষম্যের উর্ধ্বে গিয়ে তৈরি হয় নগেনের দল। যায় চোখে থাকে এক নতুন স্বপ্ন, ট্রেডস কাপ ফাইনাল ও স্বপ্নের স্বাধীন ভারতবর্ষ।

ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড : সিনেমার স্ক্রিন প্লে ও BGM এর দুর্দান্ত সহযোগ গায়ে কাঁটা দেওয়ার মত। সঙ্গে ছবির গান গুলি মন কারার মতো, বিশেষ করে নির্মাল্য রায়ের গান ও সঙ্গে বিক্রম ঘোষের সঙ্গীত পরিচালনা। পাশাপাশি কুর্নিশ জানানো যায় এই ছবিতে কাজ করা সিনেমাটোগ্রাফার কে (সৌমিক হালদার) । অত্যন্ত ভাবপ্রবন সহকারে ইতিহাসের ছবি কে পুনরায় নতুন করে তুলে এনেছেন চোখের সামনে। ছবির ডিরেক্টর কে সম্ভাষণ এত সুন্দর ভাবে পর পর সিনেমার স্ক্রিন-প্লে গুলিকে সাজিয়েছেন তিনি।

দেব ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য্য

“এই মরাজাতির রক্তে একটা বিস্ফোরণ ঘটাতে হবে।”

———– ভার্গব

শেষ অবধি কি নগেন্দ্রর দল পারে ‘ট্রেডস কাপ ‘ ফাইনালে অমানবিক ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে? কি হয় তার ফলাফল? অবশ্য তার উত্তর পেতে গেলে আপনাকে সিনেমাটি অবশ্যই দেখতে হবে…অন্তথায় আপনি বঞ্চিত থেকে যাবেন এক অতি প্রাচীন ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হওয়া থেকে।

ছবির নাম – গোলন্দাজ
পরিচালনা – ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়
অভিনয়ে – দেব, ইশা সাহা, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, বিশ্বজিৎ দাস, ইন্দ্রাশিস, জন ভট্টাচার্য, অনিরুদ্ধ গুপ্ত, জাকির হুসেন, অনির্বাণ সিকদার, দুলাল দে, উজান চট্টোপাধ‌্যায়, অমিতাভ আচার্য, দেবেশ সরকার।
এছাড়াও অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন জটাধারী (বিশ্বজিৎ দাস), ক‌্যাপ্টেন জিতেন্দ্র (ইন্দ্রাশিস), বিনোদ (জন ভট্টাচার্য), সাইরাস (অনিরুদ্ধ গুপ্ত), মজিদ (জাকির হোসেন), রানার দুখিরাম (অনির্বাণ সিকদার), পুরোহিত (দুলাল দে), মণি দাস (উজান চট্টোপাধ‌্যায়), সুরদাস (অমিতাভ আচার্য), মহিদুল (দেবেশ সরকার) প্রভূত।


Share This Post

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore

Do You Want To express your thoughts

drop us a line and keep in touch