যেহেতু কলকাতায় বড় হইনি, তাই শহরটাকে ছোটবেলা থেকেই বারবার একটু সম্ভ্রমের চোখে দেখেছি। তাখন স্কুলে পড়ি, নাদিয়ার কৃষ্ণনগর-এ থাকি। ছুটিতে কলকাতাই আসার একটা অন্যরকম রোমাঞ্চ ছিল। বাবার সঙ্গে আদানিতে মোগলাই, তার পরে নিউ মার্কেটে কেনাকাটা অবশেষে কফি হাউস। অবাক বিস্ময়ে দেখতাম, বড় শহর, দোকানপাট, লোক জন, তাদের চালচলন ,কথাবার্তা আর আধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম পরের ছুটির। একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি কাটলো নদিয়াতেই, সদ্দ্য প্রেমে পরেছি।
উচ্চমাধ্যমিক সেরে হঠাৎ কলকাতার উদ্দেশে এবার একাই! গ্র্যাজুয়েশন এবার কলকাতাতেই। কলকাতা শহরে এই প্রথম তা নয় তবে কাঁধ থেকে একটা হাত যে সরে গেছে তা বেশ অনুভব করলাম, নতুন করে চিনতে হল কলকাতা শহরকে। কখনও এসপ্লানেড, কখনও শিয়ালদহ চত্বর ,কখনও প্রেমিকের হাত ধরে রবীন্দ্র সদন , গঙ্গার ধার, আবার কখনও নন্দন। ছাত্র রাজনীতিতে তখনও ঢুকিনি। এরই ফাঁকে কখন যেন শহরটা নিজের হয়ে গেল। কখনও সঙ্গীদের সাথে শহরের অলি গলিতে আড্ডা মেরেছি আবার কখনও কফি হাউসে আড্ডা মেরে কাটিয়েছি। শহরের আসল পরিবর্তনটা এবার বুজতে পারলাম। বদলেছে মানুষের চালচলন বদলেছে কথা বার্তা। বদলে গেছে কফি হাউসের চেহারা, আড্ডা হই-হুল্লোড় এখন বন্ধি স্মার্ট ফোনে। মেনে নিতে সময় লাগলো যে- “ কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই”। সময় লাগলো খাপ খায়িয়ে নিতে।
আড্ডাটা এখন আর চায়ের দোকানে নয় মুলত কাফে কফি ডে- তেই হয়। আমি যে কলকাতাকে ছোটবেলাই দেখেছিলাম আর বাড়ির বড়দের মুখে শুনেছিলাম, সেটা ছিল বিদ্রোহী কলকাতা, গরিব মানুষের কলকাতা, উঠতি প্রেমিক প্রেমিকার কলকাতা, দুরন্ত বামপন্থী ও অতি বামপন্থী আড্ডার কলকাতা, বই প্রেমিদের কলকাতা একটু একটু করে তা কেমন যেন বড় শহর গুলোর মতোই হয়ে যাচ্ছে। উড়ালপুল, উঁচু উঁচু ফ্ল্যাট বাড়ি, রুফটপ পার্টি আর যান্ত্রিক এক নাগরিক সমাজ। বুঝলাম আমার শহর পালটে গেছে, হয়তো ভালোর জন্যই। নতুন কলকাতার আভরণ অনেক কিন্তু কেমন যেন হৃদয়হীন। একেই বোধ হয় প্রগতি বলে।
লেখক পরিচিতি :
সৌম্যদীপ বিশ্বাস
নদীয়ার, কৃষ্ণনগর-এর অধিবাসী,
বর্তমানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত
বিদ্যাসাগর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের
সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র।