এস এম সুলতানের আঁকা ছবিতে ছিল এক শান্তির ছোঁয়া

Share This Post

“যে শিশু সুন্দর ছবি আঁকে, তার গ্রামের ছবি আঁকে, সে সুন্দর ফুলের ছবি আঁকে, তার জীবজন্তুর ছবি আঁকে, গাছপালার ছবি আঁকে, সে কোনোদিন অপরাধ করতে পারে না, সে কোনোদিন কাউকে ব্যথা দিতে পারে না।”

-এস এম সুলতান

শিল্প ও সাহিত্য জগতে এক বিশেষ নাম এস এম সুলতান।যার পুরো নাম  শেখ মোহম্মদ সুলতান। শিল্পী সুলতানের জন্ম হয়  ১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট, নড়াইলের মাছিমদিয়া গ্রামে। বাবা শেখ মোহম্মদ মেসের আলী ছিলেন একজন রাজমিস্ত্রী। কিন্তু সুলতানের কাছে তার বাবা ছিলেন একজন শিল্পী। তৎকালীন জমিদার বাড়ির অনেক নকশা সুলতানের বাবার করা। সুলতান সেসব কাজ দেখেছেন একদম কাছ থেকে যা তাকে পরবর্তীতে শিল্পী হতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।ভর্তি হলেও স্কুলের বাঁধাধরা নিয়মে পড়ালেখা তার ভালো লাগতো না। সময় কাটতো প্রকৃতিকে অনুভব করে। কখনো ক্লাসে বসে আবার কখনো চিত্রা নদীর পাড়ে বসে স্কেচ করতেন। স্কুলের শিক্ষক রঙ্গলাল ব্যাপারটি খেয়াল করলেন। সুলতানের খাতা দেখে বুঝতে পারলেন তার মধ্যে এক শিল্পী বাস করছে। তিনি সুলতানের ভেতরের সেই সত্ত্বাকে গড়ে তুলেতে চাইলেন। তিনি সুলতানকে তার নিজের বাড়িতে নিয়ে গেলেন। সেখানে রঙ্গলাল সুলতানকে তার সব জ্ঞান উজাড় করে দিলেন।কলকাতায় গিয়ে আর্ট শিখতে চাইলেও সেই আর্থিক সঙ্গতি ছিলো না সুলতানের। এক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা করেন এলাকার জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত।  সুলতান কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দেন এবং প্রথম স্থান অধিকার করেন। কিন্তু সেখানে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা তার ছিলো না। সেখানে ভর্তি হওয়ার জন্য তাকে সহযোগিতা করেন শিল্প সমালোচক শাহেদ সোহরাওয়ার্দী। এ সময় শাহেদ সোহরাওয়ার্দী তার লাল মিয়া নাম পাল্টে এস এম সুলতান । আর্ট স্কুলে ভালো করলেও ফাইনাল পরীক্ষার আগে আর্ট স্কুল ছেড়ে তিনি দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়াতে থাকেন। কাশ্মীরে আদিবাসীদের সাথে থাকতে শুরু করেন। আঁকতে শুরু করেন তাদের জীবনযাত্রা। বোহেমিয়ান ছিল তার জীবনধারা। প্রচারবিমুখ এ মানুষটি তার কাজের প্রতিও ছিলেন বেখেয়ালী। জীবনে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। যে জায়গায় কাজ করেছেন সেখানেই তা ফেলে এসেছেন। এভাবে চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছে সুলতানের অনেক কাজ।কানাডার এক নারী মিসেস হাডসনের সহযোগিতায় সুলতানের প্রথম চিত্র প্রদর্শনী হয় সিমলায়। ১৯৪৭ সালে সুলতানের একক চিত্র প্রদর্শনী হয় লাহোরে। সুলতানের ছবি পিকাসো, সালভাদর দালির মতো শিল্পীর সাথে একই সাথে প্রদর্শিত হয় ইউরোপের এক প্রদর্শনীতে। দেশে-বিদেশে প্রায় ২০টি চিত্র প্রদর্শনী শেষে ১৯৫৩ সালে দেশে ফিরে আসেন সুলতান। ফিরে এসে ঢাকায় তিনি কোনো চাকরি পাননি। কারণ শিক্ষকতা করার মতো প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা তার ছিল না। পরে তিনি গ্রামে ফিরে আসেন। গ্রামে তার জায়গা-জমিও বেদখল হয়ে যায়। দেশ-বিদেশ থেকে তিনি বিশেষ বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। তার ছবি মূল বিষয় ছিল অন্যরকম। তথাকথিত আধুনিক চিত্রকলার অ্যাবস্ট্রাক্ট আর্টের ধরণ তিনি গ্রহণ করেননি। তিনি আঁকতেন মানুষ, কৃষক, নারী, শিশু, গাছপালা, গ্রামের দৃশ্য এসব। তার ছবি দেখলেই বোঝা যায় প্রকৃতির প্রতি তার সমর্পণ কেমন ছিল।তাঁর অন্যতম গুণ যে বাঁশি ও  তবলা বাজাতে পারতেন অদ্ভুত সুন্দরভাবে। শাড়ি পরে পায়ে ঘুঙুর দিয়ে নাচতেন অদ্ভুতভাবে।পরতেন আলখাল্লা। মাথায় লম্বা চুল। নিজের তৈরি জগতেই বিভোর হয়ে থাকতেন সুলতান।

১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী তাকে ‘আর্টিস্ট ইন রেসিডেন্স’ ঘোষণা করে। ১৯৯৪ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকার ‘গ্যালারি টনে’ ছিল সুলতানের শেষ চিত্র প্রদর্শনী। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর সুলতান এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যান।১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী তাকে ‘আর্টিস্ট ইন রেসিডেন্স’ ঘোষণা করে। ১৯৯৪ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকার ‘গ্যালারি টনে’ ছিল সুলতানের শেষ চিত্র প্রদর্শনী। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর সুলতান এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। তার শিল্পের মধ্যেই তিনি আজও   অমর।নিজের খ্যাতিকে হাতিয়ার করেন নি।  সবকিছু ছেড়ে গ্রহণ করেছেন সংগ্রামের পথ। সাধারণ মানুষ ও জীবনের কাছাকাছি থাকতে চেয়েছেন। তাই তার কাজকর্মও ছিল তথাকথিত স্বাভাবিক থেকে আলাদা পরিসরের। 

 লেখক পরিচিতি : নাফিসা  
বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্রী  
বিষয় : জার্নালিসম ও মাস কম

Share This Post

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore

Do You Want To express your thoughts

drop us a line and keep in touch