‘যতোই করো বাহানা মাস্ক ছাড়া ফ্যাশন না’

Share This Post

কাঁসরঘন্টা বাজিয়ে ২৪ শে মার্চ প্রথম লকডাউন এর সূচনা হয় সারা ভারত জুড়ে। তাই প্রথমে মানুষ সন্ধিয়ান ছিল এবছর পুজো আদৌ হবে কিনা, তবে আনলক প্রক্রিয়া শুরু হবার পর যখন সরকার ঘোষণা করল যে পুজো হবে কিন্তু যথেষ্ট বিধিনিষেধ মেনে স্বভাবতই বাঙালির উৎসবের আত্মহারা হয়ে ওঠার কোনো ঘাটতি ছিল না। সে ক্ষেত্রে বলাবাহুল্য বাঙালির কাছে দুর্গাপূজার সাথে ফ্যাশন বিষয়টা খুবই প্রাসঙ্গিক। প্রত্যেক বছরই মানুষের ঢলে ভিড় গাদাগাদি অবস্থায় ঠাকুর দেখতে কমবেশি সবাই ফ্যাশন এর দিক থেকে একটু হলেও কম্প্রোমাইজ করে। হালকা ফুলকা জামাকাপড় লাইট মেকওভার করতেই পছন্দ করে মেয়েরা। কিন্তু এবছর যেহেতু প্যানডেমিক এর জন্য সবাইকেই সোশ্যাল ডিসটেন্স মাথায় রেখে যতটা পারা যায় নিজেদের আবাসিক পূজার প্যান্ডেলে বা পাড়ার পুজো বা ঘরোয়া পুজোতেই সময় কাটাতে হবে বেশী সেখানে এটাই সুযোগ ছিল নিজেকে পুরোপুরি সাজিয়ে একটা কমপ্লিট লুক দেওয়ার।

কিন্তু সমস্যা ঐখানেই যে বছরটা ২০২০, আর এই সময় দাঁড়িয়ে নিজেকে যতই পরিপাটি করে সাজাও না কেন সব থেকে ম্যান্ডেটরি হলো মাস্ক পরা। মাস্ক পড়তে বাঙালি এখন অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে। বরং যদি কেউ না পড়ে বাইরে বেরোয় তাহলে সে আদর্শ নাগরিক নয় এমন ধারণাও তৈরি হয়েছে অনেকের মধ্যে। তাই এ বছর পুজোয় নতুন ফ্যাশন হিসেবে উদ্ভব হয়েছে থ্রি লেয়ার বিশিষ্ট বিভিন্ন ডিজাইনের ‘দূর্গামাস্ক’ এর।পুজোর সময় নিজেকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে নেওয়ার জন্য যে সাজপোশাক তার সাথে যাতে বেমানান না লাগে তাই মেয়েদের শাড়ি বা সালোয়ারের সঙ্গে আর ছেলেদের শার্ট বা পাঞ্জাবির সঙ্গে ম্যাচিং করে কাপড়ের ম্যাচিং ডিজাইনের মাস্ক দেখা গেছে কিশোর -কিশোরী প্রবীণ থেকে শুরু করে বয়স্কদের মুখেও। কারো মাস্কে হয়তো শান্তিনিকেতনের কাঁথাস্টিচ, কারো আবার গুজরাটি সেলাইয়ের কাজ কোথাও আবার বাংলার প্রাচীন পট চিত্র আঁকা মাস্ক। আবার অ্যাপ্লিকের মতো নানা রঙের টুকরো কাপড় জুড়ে জুড়ে বা পুরুলিয়ার ছৌ এর মুখোশ এর আদলে তৈরি মাস্ক দেখা যাচ্ছে অনেকের মুখে।

  এবারের পুজোর ফ্যাশন ট্রেন্ড ছিল হ্যান্ডলুম৷ ইন্ডিয়ান, ওয়েস্টার্ন, মেয়েদের শাড়ি এমনকী ছেলেদের কুর্তা সবকিছুতেই হ্যান্ডলুমের ছোঁয়া৷ বাজারও ছেয়ে গেছে হ্যান্ডলুম ড্রেসে৷ মেয়েদের পোশাকের মধ্যে হ্যান্ডলুমের শাড়ি সবচেয়ে বেশি চলছে৷ এছাড়া ট্রাডিশনালের মধ্যে ইক্কত, পোচমপল্লির বিক্রি হয়েছে বেশি৷ তবে জর্জেটের শাড়ি তুলনামূলকভাবে কম চলেছে এবারের পুজোয়৷ তবে পুজোয় অনেকেই বাঙালি ঐতিহ্য বজায় রাখলেও শর্ট ড্রেসের চাহিদা কিছু কম নেই৷জাম্প শ্যুট, ইন্ডিয়ান টেক্সটাইলের গাউন, ক্রপ টপ, বিভিন্ন ধরনের পলাজ়ো – বেশি ঘের, কম ঘের, স্ট্রেট পলাজ়ো সমান তালে পাল্লা দিয়ে চলেছে।

আর রমণীদের কাছে পোশাক বৈচিত্রের পাশাপাশি নিজেদের সুন্দর মুখে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য রেষারেষি হলো এই উৎসব। তাদের টানা টানা দুর্ধর্ষ কাজল কালো চোখ ঠিক আছে কিন্ত ঠোঁটের উপরের কালো তিলটা আর জামার সাথে ম্যাচিং করা সেই অনুপম লিপস্টিক! সবই তো ঢাকা থাকবে মাস্ক এর নিচে। পুজোয় এই চারদিন ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে সেই বঙ্গনারীর সুন্দর আকর্ষণীয় মুখটি যদি ছেলেটা দেখতেই না পেলো তাহলে আর রইল কি? তাই ডিজাইনাররা মেয়েদের জন্য বিশেষ এক ধরনের স্বচ্ছ মাস্ক তৈরি করার চেষ্টা করেছেন, যাতে তাদের ঠোঁটের চারপাশটা এক ধরনের পাতলা মেটেরিয়াল দিয়ে তৈরি করা থাকবে। ফলে এটি মুখে পড়তেই ঠোঁট সমেত মুখের বেশ খানিকটা অংশও দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।

নামকরা বুটিক গুলো তো তাদের আলাদা একটা মাস্ক সেকশন তৈরি করেই ফেলেছে। শাড়ির সঙ্গে যেমন ব্লাউজপিস দেওয়া থাকে, তেমনি প্রত্যেক শাড়ি জামা সালোয়ার এর সাথে তারা ম্যাচিং করে মাস্ক ও রাখা শুরু করেছে। আর ছেলেদের মুখে দেখা গেছে জামার সাথে মানানসই লো-লেদার মাস্ক।

মাস্ক যখন সবে চালু হলো, তখন সবচেয়ে বেশী মুশকিলের ছিল ছোটদের তা পরিয়ে রাখা। দীর্ঘক্ষন ধরে মুখের ওপর অস্বস্তিকর কোন জিনিস পড়ে থাকতে ওরা চাইবেই বা কেন বলুন! কিন্তু তারা যাতে আনন্দ করে মাস্ক পড়ে সেজন্য তাদের প্রিয় কার্টুন আর কমিকস চরিত্রের ছবি আঁকা মাস্ক দেখা যাচ্ছে দোকানগুলিতে। টম এন্ড জেরি থেকে আরম্ভ করে ছোটা ভীম সবাইকে খুঁজে পাওয়া যাবে সেখানে।

লেখক
দীপ্তরূপা সাঁতরা

Share This Post

Subscribe To Our Newsletter

Get updates and learn from the best

More To Explore

Do You Want To express your thoughts

drop us a line and keep in touch